সেন্ট মার্টিনে প্লাস্টিক বর্জ্যের বিনিময়ে বাজারসদাই

সেন্টমার্টিন দ্বীপে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের দোকানে প্লাস্টিক বর্জ্য জমা দিয়ে বাজার-সদাই নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয়রা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে। ছবি: সংগৃহীত
সেন্টমার্টিন দ্বীপে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের দোকানে প্লাস্টিক বর্জ্য জমা দিয়ে বাজার-সদাই নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয়রা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে গতকাল বৃহস্পতিবার  শতাধিক মানুষ প্লাস্টিক বর্জ্য জমা দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেয়েছেন। বিকেল পর্যন্ত দ্বীপের নারী–পুরুষেরা গলাচিপা এলাকার মেরিন পার্কের ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোরে’ প্লাস্টিক জমা দিয়ে পছন্দের বাজারসদাই করেন। জেলা প্রশাসন ও বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগ এবং ট্যুরিস্ট পুলিশের সহযোগিতায় পরিবেশদূষণ প্রতিরোধে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল ১০টা থেকে দ্বীপের গলাচিপা, দক্ষিণপাড়া, মাঝেরপাড়া, পশ্চিমপাড়ার শতাধিক নারী–পুরুষ দোকানের সামনে এসে লাইনে দাঁড়ান। সবার হাতে প্লাস্টিক বোতল। কেউ কেউ বস্তায় ভরে নিয়ে আসেন প্লাস্টিক বর্জ্য। ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ নামের ওই দোকানে প্লাস্টিক বর্জ্য জমা দিলে বিদ্যানন্দ যে টাকা দেয়, তা দিয়ে  নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে নেন স্থানীয় লোকজন। এই দোকান থেকে ২০ ধরনের পণ্য কেনার সুযোগ রয়েছে।

এখানে এক বস্তা প্লাস্টিক বোতল জমা দিয়েছেন দ্বীপের গলাচিপা এলাকার গৃহবধূ রহিমা আকতার (৪৫)। রহিমা বলেন, গত নভেম্বর থেকে দ্বীপে পর্যটকের সমাগম ঘটছে। পর্যটকেরা ভ্রমণে এসে মিনারেল ওয়াটারের বোতল কেনেন। পানিটুকু খেয়ে প্লাস্টিক বোতল এখানে–সেখানে ছুড়ে মারেন। এসব সংগ্রহ করে দোকানে নিয়ে আসেন তিনি।

মাঝেরপাড়ার জেলে সিরাজ উল্লাহ (৪৫) বলেন, চার–পাঁচ দিনে তাঁর দুই ছেলে সৈকত থেকে দুই বস্তা প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেছে। এসব জমা দিয়ে তাঁরা দোকান থেকে তেল, ডাল, লবণ সংগ্রহ করেছেন।  

সেন্ট মার্টিনের সামুদ্রিক শৈবাল ও রঙিন প্রবালসমৃদ্ধ বিশাল সমুদ্রের মনোরম দৃশ্য সবার নজর কাড়লেও প্রতিনিয়ত সমুদ্র ও দ্বীপের পরিবেশের অবনতি ঘটছে। যেখানে–সেখানে, এমনকি সমুদ্রের পানিতে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলার কারণে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে দূষণ। এতে হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ এবং সমুদ্রের মাছ, প্রাণী ও উদ্ভিদ।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের এই প্লাস্টিক দূষণ কমানোর জন্য একদল স্বেচ্ছাসেবী গ্রহণ করেছেন একটি নতুন উদ্যোগ। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এই উদ্যোগের আওতায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপে স্থাপন করা হয়েছে ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’। যেখানে মানুষ তাঁদের ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্যের খালি পাত্র বা বোতল জমা দিয়ে নিতে পারেন চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। এতে স্থানীয় লোকজনের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা যেমন পূরণ হবে, ঠিক তেমনই কমবে পরিবেশদূষণ। এই ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ প্রতি মাসে দুইবার করে চালু থাকছে। ফলে মানুষ তাঁদের জমানো প্লাস্টিক বর্জ্য এখানে বিক্রি করে চাহিদা অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়মিত কিনে নিতে পারবেন।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড সদস্য মো. জামাল উদ্দিন বলেন, সংগৃহীত প্লাস্টিক বর্জ্য এখান থেকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে রিসাইকেল করা হয়। সংগৃহীত প্লাস্টিকের একটি অংশ দিয়ে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবীরা কক্সবাজার সৈকতে তৈরি করেন বিশাল আকৃতির একটি ‘প্লাস্টিক দানব’।

এই দানব তৈরির মাধ্যমেই বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন মানবসমাজকে একটি বার্তা দিতে চায় যে প্লাস্টিকের ফলে পরিবেশ যে হারে দূষিত হচ্ছে, তা ধীরে ধীরে দানবে রূপ নিচ্ছে। আর এই দানবই পরে মানবসভ্যতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান বলেন, ‘সেন্ট মার্টিনসহ অন্যান্য দ্বীপ ও সমুদ্রসৈকত দূষণমুক্ত রাখতে জেলা প্রশাসন নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরও মানুষের অসচেতনতা ও অবহেলার কারণে সেটি পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে ও তাদের সম্পৃক্ত করে যে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে জেলা প্রশাসন। আশা করছি, এই উদ্যোগের মাধ্যমে দ্বীপের পরিবেশ রক্ষা হবে।’

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন একটি শিক্ষাবান্ধব বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। অনাথ ও বঞ্চিত শিশুদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য বিদ্যানন্দ এক টাকায় আহার, শীতকালীন ও ঈদে নতুন কাপড় বিতরণ, বিনা মূল্যে শিক্ষা কর্মসূচি, এক টাকায় চিকিৎসাসহ বেশ কয়েকটি নিয়মিত কর্মসূচি পরিচালনা করছে।