রাজশাহী নগরের কাজলা অকট্রয় মোড় এলাকায় রাস্তায় কাজ করছিলেন বাসন্তী রানী। রাস্তার একটি কালভার্ট তৈরির জন্য পাথরবোঝাই ডালা মাথায় করে নিয়ে ফেলছিলেন তিনি। মাঝেমধ্যেই মুখ–চোখ মুছছিলেন। বাসন্তী জানান, সারা দিন কোনো রোদ নেই। কিন্তু গরমে ঘেমে যাচ্ছেন। ভ্যাপসা গরম পড়েছে।
বাসন্তী রানীর সঙ্গে কথা হয় আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে। রোদ না থাকলেও ভ্যাপসা গরমে তাঁরা হাঁপিয়ে উঠেছেন বলে জানান। বাসন্তী রানী আরও জানান, সকাল সাড়ে ৮টায় কাজে এসেছেন। রাজশাহীর তানোরে বাড়িতে যেতে যেতে সন্ধ্যা হবে। সারা দিন কাজ করে সাড়ে ৩০০ টাকা পান। পরিশ্রমের কাজ, কিন্তু দাম কম। আর গরমের কথা কী আর বলবেন?
রাজশাহীতে ৮ মে রাতে ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এই বৃষ্টি ছিল টানা খরার পর। এর আগে বৃষ্টি হয়েছিল ৩১ মার্চ। ৯ মে ২ মিলিমিটার ও গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রা বেড়েছে। এপ্রিলের তুলনায় তাপমাত্রা কম হলেও বাতাসের জলীয় বাষ্পের কারণে গরমের তীব্রতা বেশি।
রাজশাহীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ৩৮ দিনের টানা খরার পর ৮ মে রাতে ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এরপর আবহাওয়া কিছুটা শীতল হয়। দুই দফা বৃষ্টি হলেও আবহাওয়া উত্তপ্ত হতে থাকে। বেড়েছে তাপমাত্রা। গত বুধবার রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বৃহস্পতিবার ৩৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল শুক্রবার ছিল ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর আজ বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ছিল ২৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বেলা ৩টায় বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৫৪ শতাংশ।
আবহাওয়াবিদেরা জানান, ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পর্যন্ত মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। সেই হিসেবে রাজশাহীতে আজ মৃদু তাপপ্রবাহ চলছে।
রাজশাহী আবহাওয়া দপ্তরের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকায় বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে। এটা অব্যাহত থাকতে পারে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কদম শহর এলাকায় বেশ কয়েকজন কৃষিশ্রমিক সকাল থেকেই ধান কাটার কাজ করছিলেন। এক শ্রমিক বলেন, আবহাওয়াটা কেমন যেন গুমোট হয়ে আছে। সকাল থেকে খুব গরম। বৃষ্টি দরকার। কিন্তু বৃষ্টি হলে আবার ধান কাটা হবে না।
একই এলাকায় ধান মাড়াই করছিলেন কয়েকজন। তাঁদের একজন হেমন্ত সরকার বলেন, খুব গরম পড়েছে। শরীর থেকে ঘাম ঝরে যাচ্ছে।