স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে তিন সন্তান নিয়ে অনশন করছেন মোছা. শাহিদা আক্তার। আজ বুধবার সকালে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে
স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে তিন সন্তান নিয়ে অনশন করছেন মোছা. শাহিদা আক্তার। আজ বুধবার সকালে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে

স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে তিন সন্তান নিয়ে শাহিদার অনশন

ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে তিন সন্তান নিয়ে অনশন করছেন মোছা. শাহিদা আক্তার ওরফে রুমা (৩০) নামের এক নারী। বিচারের দাবিসংবলিত ব্যানার টানিয়ে আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে তিনি অনশন করছেন।

শাহিদা আক্তারের ব্যানারে লেখা ‘আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। আমার ও এতিম তিন সন্তানের ওপর হওয়া অন্যায়–অত্যাচারের বিচার চাই।’ বাড়িঘর, জমাজমি, মোটরসাইকেল ও ব্যবসার অর্থ ফেরত চাওয়ার বিষয়টি ব্যানারে উল্লেখ করেছেন তিনি। দুই বছরে গৌরীপুর থানা থেকে সহযোগিতা পাননি, পুলিশ আমলে নেয়নি হত্যা মামলা। তাই প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের কাছে বিচার দাবি জানাচ্ছেন তিনি।

আজ দুপুর ১২টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে মানুষের জটলা দেখা যায়। দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া সাত বছর বয়সী সুফফাত জাহান লামিয়া, চার বছর বয়সী আবদুল্লাহ আল আফ্রিদি ও আড়াই বছর বয়সী আবদুল্লাহ আফিফকে পাশে নিয়ে বসে আছেন শাহিদা আক্তার। জড়ো হাওয়া মানুষের কাছে স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে সহযোগিতা চান তিনি। শাহিদার সঙ্গে তাঁর মা সালেহা বেগমও ছিলেন।

সেখানে আলাপকালে শাহিদা আক্তার বলেন, ‘সম্পত্তির লোভে আমার ভাশুর বিপ্লব খান আমার স্বামীকে মেরেছে। আমার শ্বশুর নাজিম উদ্দিন সহযোগিতা করেছে। ঘটনার পর পুলিশের কাছে বহুবার ঘুরেছি, প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে গেছি। কিন্তু বিচার পাচ্ছি না। আদালতে মামলা করলেও পুলিশ আদালতকে দেওয়া প্রতিবেদনে বলেছে, আমার স্বামী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে। তারপর আদালত মামলা খারিজ করেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছোট সন্তানের ৪০ দিন বয়সের সময় তার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর আমাকে বাড়ি থেকে বের করে সবকিছু দখলে নিয়ে নেয় বিপ্লব। কিন্তু কোথাও এসবের বিচার পাচ্ছি না।’

শাহিদা আক্তার বলেন, আজ তাঁর কষ্টের সীমা নেই। স্বামী বেঁচে থাকলে এমন অবস্থা হতো না। প্রেম করে বিয়ের পর বাবার বাড়ি থেকে নিজের অংশ বিক্রি করে স্বামীকে এনে দিয়েছিলেন। এখন বাবার বাড়িও নেই। তিন এতিম সন্তান নিয়ে এখন কোথাও যাওয়ার জায়গাও নেই।

অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য শাহিদার শ্বশুর নাজিম উদ্দিন খানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার পূর্ব মধ্যপাড়া গ্রামের আবুল কাশেমের মেয়ে শাহিদা আক্তার। প্রেম করে ২০১৩ সালে বিয়ে করেছিলেন গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের কলতাপাড়া গ্রামের নাজিম উদ্দিন খানের ছেলে রোকনুজ্জামান খান চপলকে। ২০২২ সালের ১৭ মার্চ রোকনুজ্জামান মারা যান। এ ঘটনায় পুলিশ জানিয়েছিল, রোকনুজ্জামান বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেলে তাঁর বাবা নাজিম উদ্দিন একটি অপমৃত্যু মামলা করেন। পরে লাশ বিনা ময়নাতদন্তে নিতে পরিবারের সদস্যরা আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেন। পরে তিন সন্তান নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন শাহিদা। সন্তানদের দেখাশোনা করেন শাহিদার মা সালেহা।

পুলিশের ভাষ্য, শাহিদা আক্তারকে বেশ কয়েকবার তাঁর শ্বশুরবাড়িতে আলোচনার মধ্যমে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি সেখানে থাকতে চাননি। ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরীপুর সার্কেল) মো. সুমন মিয়া বলেন, বিভিন্ন সময় স্বামীকে হত্যার অভিযোগ দিলেও তদন্তে হত্যার কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যাওয়ার পর একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছিল।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক (ডিসি) দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, ‘অনশন করা নারীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ওই নারী দাবি করছেন, তাঁর স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে, আর পুলিশ বলছে, বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’