পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার বাড়িতে বিলাসবহুল তেমন কিছুই পাওয়া যায়নি। বাড়ির ভেতরে যা ছিল, তা সবই ‘লোকাল প্রোডাক্ট’।
আজ বুধবার বেনজীর আহমেদের রূপগঞ্জের বাড়িতে চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তল্লাশি চালিয়ে এমনটিই জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও দুদকের সমন্বিত দল। তল্লাশির সময় বাড়ির ভেতরে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
আজ দুপুর সাড়ে ১২টার পর জেলা প্রশাসন ও দুদকের একটি সমন্বিত দল বাড়ির ডিজিটাল লক খুলে ভবনের ভেতর প্রবেশ করে। এ সময় বাড়ির ভেতর সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়। তল্লাশি চলার সময় কেউ যেন বাড়িতে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য বাড়িটির প্রধান ফটকে আনসার ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বাড়িতে তল্লাশি চলে।
তল্লাশি শেষে বিকেল পাঁচটার দিকে বাড়ির সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দলের প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শফিকুর আলম। এ সময় দুদক নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপপরিচালক মইনুল হাসান রওশনী, রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আহসান মাহমুদসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা, কর্মচারী ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বেনজীর আহমেদের বাড়িতে তল্লাশির খবর পেয়ে আশপাশের এলাকার উৎসুক মানুষ সেখানে ভিড় করেন। তল্লাশি শেষে শফিকুর আলম বলেন, ‘বাড়িতে একটি পরিবার থাকলে যে রকম জিনিসপত্র পাওয়া যায়, সেগুলোই আমরা পেয়েছি। রান্নাঘরে চায়ের কাপ, আসবাব, টিভি—এ ধরনের জিনিসপত্র আমরা পেয়েছি। আমরা এসবের তালিকা করেছি।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শফিকুর আলম বলেন, ‘এসব আসবাব সাধারণ মানেরই মনে হয়েছে। সবকিছুই লোকাল প্রোডাক্ট। টিভি ছিল ওয়ালটনের এবং এসিও ওয়ালটনের ছিল। কিছু শোপিস, কিছু বইপত্র পেয়েছি, সোফা সেট ছিল।’
নির্ভুলভাবে তথ্য সংগ্রহের সুবিধার জন্য তল্লাশির সময় বাড়িতে সাংবাদিক প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি বলে জানান শফিকুর।
বাড়ির কোনো কিছুই জব্দ করা হবে না বলে সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এগুলো আমরা জব্দ করছি না। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এখানে কী কী আছে, তার একটি তালিকা করা হয়েছে। আমরা তা আদালতে পেশ করব।’
মইনুল হাসান বলেন, ‘এর আগে এই বাড়িতে ডিজিটাল লক থাকায় প্রবেশ করতে পারিনি। আজ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে এই তালা খোলা হয়েছে।’
এর আগে সাবেক এই আইজিপির সম্পদ জব্দের নির্দেশ দেন আদালত। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গত শনিবার বিকেলে বাড়িটিতে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন ও দুদকের সমন্বিত দল। এ সময় ডিজিটাল লক সিস্টেমে বাড়ি বন্ধ থাকায় ভবনের ভেতর প্রবেশ করা যায়নি। পরে বাড়িটির সামনে ‘ক্রোক বিজ্ঞপ্তি’ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী রূপগঞ্জের আনন্দ হাউজিং সোসাইটির ভেতর ২৪ কাঠা জমির ওপর নির্মাণ করা বাড়িটির নাম সাভানা ইকো রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড, যার মালিক বেনজীর আহমেদের মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ডেমরা-ইছাপুরা (রূপগঞ্জ) সড়কের পাশে ২৪ কাঠা জায়গাজুড়ে প্রায় চার বছর আগে বাড়িটি তৈরি করেন বেনজীর আহমেদ। নিজের মেয়ের মালিকানাধীন বাড়িটির নাম দেওয়া হয় সাভানা ইকো রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড। এর আগে আনন্দ হাউজিং সোসাইটির নামে স্থানীয় প্রেমানন্দ সরকারের মালিকানাধীন একটি ৫৫ শতাংশের জলাশয় জোর করে ভরাট করা হয়। পরে ভরাট করা ওই জমি ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকায় কিনে নেন বেনজীর আহমেদ।
বিদেশি স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি বেনজীরের এই বাড়ি নিয়ে স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে নানা গল্পের প্রচলন আছে। স্থানীয় লোকজন জানতেন উপহার হিসেবে পাওয়া বেনজীরের ডুপ্লেক্স বাড়িটির নির্মাণসামগ্রী থেকে শুরু করে আসবাব সবকিছুই বিদেশি।