বহেড়াতৈল রেঞ্জের কাঁকড়াজান বিট কার্যালয়ের আনুমানিক ১০০ গজ পশ্চিমে ও উত্তরে দুটি করাতকল স্থাপন করা হয়েছে।
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় বন বিভাগের তিনটি রেঞ্জের ১১টি বিট কার্যালয়ের আওতাধীন এলাকায় অবৈধভাবে ৪২টি করাতকল গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংরক্ষিত শাল-গজারি ও সামাজিক বনায়ন এলাকা ঘেঁষে এসব করাতকল স্থাপন করা হয়েছে। এমনকি কয়েকটি করাতকল বন কর্মকর্তাদের কার্যালয়ের ১০০ গজের মধ্যেই গড়ে উঠেছে।
বহেড়াতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা আমিনুর রহমান বলেন, করাতকল বিধিমালা ২০১২ অনুযায়ী, সংরক্ষিত, রক্ষিত ও সরকারি যেকোনো ধরনের বনভূমির সীমানা থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাবে না।
সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রধান লুৎফর রহমান বলেন, এভাবে অবৈধ করাতকলে দিনরাত বনের কাঠ চেরানো হলে আস্তে আস্তে এসব প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হয়ে যাবে। ফলে পরিবেশের ওপর এর দারুণ প্রভাব ফেলবে। দিন দিন বনায়ন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ায় গরমকালে প্রচণ্ড গরম আর শীতকালে শীত পড়ে।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, অবৈধ ৪২টি করাতকলের মধ্যে বহেড়াতৈল রেঞ্জে ২৮টি, হাতিয়ায় ৭টি ও বাঁশতৈল রেঞ্জে ৭টি কল গড়ে উঠেছে। বহেড়াতৈল রেঞ্জের কাঁকড়াজান বিট কার্যালয়ের আনুমানিক ১০০ গজ পশ্চিমে জয়নাল আবেদিন ও উত্তর পাশে নূর জামাল দুটি করাতকল স্থাপন করেছেন। গত শনিবার গিয়ে দেখা যায়, নূর জামালের কলে চারজন শ্রমিক কাজ করছেন। করাতকলের ডকে একখণ্ড গাছ তুলে দুই পাশে দুজন শ্রমিক চেরাই করছেন। একজন কাঠের অপ্রয়োজনীয় অংশ (লাকড়ি) গুছিয়ে আলাদা এক জায়গায় স্তূপ করে রাখছেন।
কাঠ চেরানো এ দৃশ্যের ছবি তুলতে গেলে করাতকলের মালিক নূর জামাল পেছন দিক থেকে এসে বাধা দেন। নূর জামাল বলেন, ‘বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই আমরা এসব করাতকল চালাই। ছবি তুলে আপনি কী করবেন?’
বন কার্যালয়ের পাশে করাতকল কীভাবে চলছে? জানতে চাইলে কাঁকড়াজান বিট কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে কথা বলতে রাজি হননি।
গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে কাঁকড়াজান বিটের আওতাধীন বড় হামিদপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে আনসার আলী নামের এক ব্যক্তি করাতকল স্থাপন করেছেন। বেলা পৌনে ১১টার দিকে করাতকলটি বন্ধ পাওয়া যায়। আনসার বলেন, যখন স্কুল শুরু হয়, তখন করাতকল বন্ধ রাখেন।
বড়হামিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হাশেম বলেন, বিদ্যালয় চলাকালে করাতকলের শব্দে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটে। এ ছাড়া কাঠের গুঁড়া শিশুদের চোখে এসে পড়ে।
বহেড়াতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা আমিনুর রহমান বলেন, তাঁরা মাঝেমধ্যেই অবৈধ করাতকলগুলো উচ্ছেদ করেন। এমনকি অবৈধ কলমালিকদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও করেছেন। কিন্তু উচ্ছেদ করার এক সপ্তাহ পরেই আবার তাঁরা সেখানেই কল স্থাপন করেন। আর বন কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করার বিষয়টি সত্য নয়।
এসব অবৈধ করাতকল উচ্ছেদের দাবি জানিয়ে টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তার (ডিএফও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সখীপুর পৌরসভার বৈধ করাতকল মালিক সমিতির নেতারা। কিন্তু তাঁরা কোনো সমাধান পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, প্রতিটি অবৈধ করাতকলে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০ ঘনফুট কাঠ চেরাই হচ্ছে। সেই হিসাবে ৪২টি অবৈধ করাতকলে প্রতিদিন ৮ হাজার ৪০০ ঘনফুট কাাঠ চেরাই হচ্ছে।
সখীপুর পৌরসভার বৈধ করাতকল মালিক সমিতির সভাপতি জিন্নত আলী ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক বলেন, পৌরসভার ভেতরে ৫০টি বৈধ করাতকল রয়েছে। অবৈধ করাতকলের জন্য তাঁরা দিন দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
হাতিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল আহাদ বলেন, তিনি এই রেঞ্জে যোগদান করার পর কমপক্ষে ২৫টি করাতকল উচ্ছেদ করেছেন। এখন মাত্র ছয়-সাতটি করাতকল রয়েছে।
টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সাজ্জাদুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, সব অবৈধ করাতকল উচ্ছেদে অভিযান চালানো হবে।