কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিদ্রুত একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার লক্ষ্যে আজ রোববার প্রশাসনিক ভবনে এক আলোচনা সভা ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপাচার্যের সঙ্গে আয়োজিত ওই সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আলাদা করে চিঠি দেওয়া হয়।
কিন্তু শিক্ষক সমিতি ওই সভা প্রত্যাখ্যান করে পাল্টা চিঠি দেয়। এতে শিক্ষক সমিতি সাফ জানিয়ে দেয়, বিশ্ববিদ্যালয় খোলা বা বন্ধ রাখার ব্যাপারে শিক্ষক সমিতির কোনো দায় নেই। উপাচার্য নিজেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আমিরুল হক চৌধুরী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানকে চিঠি দেন। ওই চিঠিতে আজ রোববার (২৬ মে) দুপুর ১২টায় প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্যের অস্থায়ী কার্যালয়ে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য বলা হয়। ওই সভায় শিক্ষক সমিতির নেতারা যাননি। শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রেজিস্ট্রারের কাছে সকালে সভায় অংশ নিতে পারবেন না বলে পাল্টা চিঠি দেন।
রেজিস্ট্রারের কাছে লেখা চিঠিতে শিক্ষক সমিতি উল্লেখ করেছে, ‘একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার পূর্বশর্ত হলো বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রাখা। গত ৩০ এপ্রিল জরুরি সিন্ডিকেটের ৯৩তম সভায় মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে সিন্ডিকেটকে প্রভাবিত করে বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলো বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন উপাচার্য নিজেই। তবে শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে হলে অবস্থান করছে। যেহেতু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করেছেন উপাচার্য, সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা বা বন্ধ রাখার ব্যাপারে শিক্ষক সমিতির কোনো দায় নেই এবং এ–সংক্রান্ত কোনো নির্বাহী দায়িত্বও শিক্ষক সমিতির ওপর বর্তায় না। তাই আলোচনার বিষয়ে অপারগতা পোষণ করছি।’
জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবু তাহের বলেন, ‘আমরা এখন উপাচার্য পতনের এক দফা দাবিতে আছি। ওনার সঙ্গে আলোচনার কোনো পরিবেশ নেই। ২৮ এপ্রিল শিক্ষকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা করে তিনি বিচার করেননি। তাঁর সঙ্গে সরাসরি কোনো আলোচনার সুযোগ নেই। সর্বোচ্চ পর্যায়ের কেউ ডাকলে সেটা হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বন্ধ করেছেন। শিক্ষক সমিতি করেনি। উনি আগে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিক। এরপর শিক্ষক সমিতি সাধারণ সভা করে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা তো ক্যাম্পাসেই আছি। উনি সিন্ডিকেটের সভায় অসত্য তথ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধ ঘোষণা করেছেন। তাঁর সিদ্ধান্ত হলের ছেলেমেয়েরা মানেনি। তারা হলেই আছে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকে আসেননি। তাঁরা পাল্টা চিঠি দিয়েছেন।
গত ২৮ এপ্রিল বেলা একটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষক সমিতির সদস্যদের ওপর হামলা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষক সমিতি অনির্দিষ্টকালের আন্দোলন শুরু করলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে পড়ে।
উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় অতিদ্রুত খুলে দেওয়ার বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে লিখিত চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ওনারা আসেননি। আমি তো সব সময়ই আলোচনায় বসতে চাই। আলোচনার মাধ্যমে সংকট দূর হবে। নানা অসংগতি নিয়ে কমিটি হয়েছে, কমিটির প্রতিবেদন পেলে করণীয় ঠিক করা হবে।’
গত ২৮ এপ্রিল বেলা একটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষক সমিতির সদস্যদের ওপর হামলা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষক সমিতি অনির্দিষ্টকালের আন্দোলন শুরু করলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ৩০ এপ্রিল রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডাকেন উপাচার্য। সভায় উপাচার্য হলগুলোতে অস্ত্র ও টাকা ঢুকছে তথ্য দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধ করে দেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অমান্য করে হলে থাকছেন শিক্ষার্থীরা। ২৬ দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। ক্লাস ও পরীক্ষা হচ্ছে না। বাড়ছে সেশনজট। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবি জানান।