ফরিদপুরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে বাস ও ছোট ট্রাকের সংঘর্ষে ১৫ জন নিহত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে সড়ক বিভাগ। সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের দিগনগর তেঁতুলতলায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বাসটি দুর্ঘটনায় পড়ার অন্তত ১৫০ ফুট দূরে বড় ও ছোট কয়েকটি গর্ত ছিল। এর ১০০ ফুট দূরে আরও কয়েকটি গর্ত ছিল। আজ বুধবার সকালে ওই সড়কের ঘটনাস্থলের বাঁ ও ডান পাশে ২০০ ফুটের মধ্যে ৮টি গর্ত পাথর ও পিচ দিয়ে ভরাট করে তার ওপর বালু ছড়িয়ে দিয়েছে সড়ক বিভাগ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাসটি দ্রুতগতিতে ফরিদপুরের দিক থেকে আসছিল। প্রথমে একটি গর্তে বাসের সামনের বাঁ পাশের চাকা পড়ে। তখন বাসটি দুলতে দুলতে এগিয়ে ১০০ ফুট দূরে আরেকটি গর্তে পড়ে। সে সময় বাসচালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় বাসটি সড়কের উত্তর দিক ঘুরে গিয়ে অন্তত ৫০ ফুট আগাতেই সামনে থেকে আসা ছোট ট্রাকটি বাসটির সামনের চাকার পাশে বাসের গায়ে সজোরে আঘাত করে।
ফরিদপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার বলেন, সড়কে গর্ত থাকা এবং চালকের অসাবধানতার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঈদের আগে গর্তগুলো পূরণ করলে হয়তো এ দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। সড়ক বিভাগ তা না করে দুর্ঘটনার পর আজ সকালে গর্তগুলো ভরাট করেছে।
আজ বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে সরেজমিন দেখা যায়, গর্ত ভরাটের পাশাপাশি সড়কে এবড়োখেবড়ো উঁচু-নিচু জায়গা সমান করা হয়েছে। এ সময় গর্ত ভরাটের কাজ শেষ করে সড়ক বিভাগের তিন কর্মচারী বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাঁরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আজ সকাল সাতটা থেকে তাঁরা কাজ শুরু করেন। কাজ শেষ করার পর সড়ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ জায়গা পরিদর্শন করে গেছেন।
এ সময় ওই জায়গায় একটি গাড়িতে অবস্থান করছিলেন ফরিদপুর সড়ক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী শফিকুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সকাল ৯টার দিকে এসেছেন। তখন এ সড়কে কোনো গর্ত দেখতে পাননি।
শ্রমিকদের কাজ করার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি সকালে সড়ক বিভাগের উদ্যোগে কাজ করা হয়েছে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম। ওগুলো গর্ত ছিল না। “আনডুলেশন” বা “ডিপ্রেশন” বলা যেতে পারে। এ শব্দগুলোর মানে হচ্ছে এবড়োখেবড়ো ঢেউ ঢেউ থাকা।’
শফিকুর রহমান বলেন, তবে এ সড়ক পুরোপুরি মেরামত করা প্রয়োজন। এ জন্য ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুর থেকে মাগুরা পর্যন্ত এলাকা ‘ওভারল্যাপিং’ করার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
কানাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মো. আলতাফ হোসেন বলেন, সড়কের এ জায়গায় প্রতিনিয়ত গর্ত হয়। সড়ক বিভাগ কাজও করে, কিন্তু তা টেকে না। এ কারণে এ এলাকায় দুর্ঘটনা বাড়ছে।
ওই এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আনন্দ কুমার সাহা জানান, সড়কের এ গর্তগুলোর জন্য এ এলাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। ঈদের আগের দিন ৯টি মোটরসাইকেল ও ২টি ইজিবাইক দুর্ঘটনার শিকার হয় সড়কের এ জায়গায়।
এ ঘটনায় গঠিত সাত সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির ছয়জন সদস্য আজ দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কমিটির সদস্যরা জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেন।
আজ দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত কমিটির সদস্যরা সেখানে অবস্থান করেন। এ সময় কমিটির সদস্যরা কানাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মো. আলতাফ হোসেন, ফরিদপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার, ওই এলাকার বাসিন্দা আনন্দ কুমার সাহাসহ প্রায় ১৪ জন ব্যক্তির সাক্ষ্য নথিভুক্ত করেন।
সভাপতি হিসেবে এ কমিটির নেতৃত্ব দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী। অপর সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সালাউদ্দিন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইমরান ফারহান, হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন, বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মো. এমরান খান, ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান।
এডিএম মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী বলেন, ‘এ কমিটিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) একজন প্রতিনিধি রাখা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা এখন পর্যন্ত আমাদের আহ্বানে সাড়া দেননি। তিনি বলেন, ‘বুয়েটের ওই প্রতিনিধি না এলেও আমরা সময়মতো আমাদের প্রতিবেদন প্রস্তুত করে প্রাথমিক প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদারের কাছে জমা দেব।’
মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী বলেন, ‘আজ থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি। আশা করছি, আজকের দিন থেকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে আমরা প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে পারব।’