নারায়ণগঞ্জ শহরের আল্লামা রোড এলাকায় মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ওরফে রাজীবসহ (২৮) ছাত্রদলের চার নেতা–কর্মীকে ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে ছাত্রলীগ। শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। একজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আহত ব্যক্তিরা হলেন মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ওরফে রাজীব (২৮), রাজীবের ভাই ছাত্রদলকর্মী কাজল (২৭), ১৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি অনিক (২০) ও ছাত্রদলকর্মী সোহাগ (২২)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, শহরের আল্লামা ইকবাল রোড (কলেজ রোড) এলাকায় একটি চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ও সরকারি তোলারাম কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব আজিজুল ইসলাম রাজীব ও তাঁর ভাই কাজলসহ ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা–কর্মী। এ সময় মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতা শুভ, ম্যাকলিন, তোফাসহ অর্ধশতাধিক ক্যাডার সেখানে গিয়ে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা চালান। তাঁদের ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে ধরে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর ভেতরে নিয়ে এলোপাথাড়ি পেটানো হয়।
খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ ও যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেনসহ বিএনপির ১০–১২ নেতা–কর্মী ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
তাঁদেরও হেনস্থা করেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। পরে পুলিশ গিয়ে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। থানা থেকে তাঁদের চিকিৎসার জন্য নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আজিজুল ইসলামকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী।
আহত ছাত্রদল নেতা আজিজুল ইসলাম জানান, ‘ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুর রহমান রিয়াদের নেতৃত্বে ছাত্রদলকর্মী অনিককে লাঠি দিয়ে এলোপাথাড়ি পেটায়। তাঁকে বাঁচাতে গেলে আমাদের ওপরও হামলা চালায়।’
ঘটনাস্থলে যাওয়া নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবুল আল ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদল নেতা আজিজুল ইসলামসহ ছাত্রদলের চার নেতা–কর্মীকে ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর ভেতরে নিয়ে আটকে রেখে তাঁদের পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে ছাত্রলীগের শতাধিক ক্যাডার। আজিজুল ইসলাম রাজীবকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। তাঁর পা ভেঙে গেছে, মাথায় ১০টি সেলাই লেগেছে। চোখে আঘাত লেগেছে।
তবে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান। সাংবাদিকদের কাছে তিনি দাবি করেন, আহত ছাত্রদল নেতারা ছিনতাই করতে গেলে স্থানীয় লোকজন তাঁদের পিটিয়েছেন।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে প্রথম আলোকে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাঈদুজ্জামান বলেন, ‘পুলিশ মুঠোফোন ছিনতাইয়ের ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে যায়। পরে সেখান থেকে দুজনকে উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নিয়ে আসি। পরে আমরা জানতে পারি, এটি ছিনতাইয়ের ঘটনা না। ছাত্রলীগের ছেলেরা মারামারি করেছেন। কারা মারছে, কে মারছে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’