নিকলী হাওরে গোসলে নেমে আবার পর্যটকের মৃত্যু

নিকলী হাওর
ফাইল ছবি

কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওরে গোসল করতে নেমে আকাশ (২৬) নামের এক পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে নিকলী হাওরের কুর্শা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত আকাশ মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার দক্ষিণ রাজদি গ্রামের রেজাউল করিমের ছেলে। এ সময় আকাশের বন্ধু তুহিন (২৫) ও হাসিব (২৬) নামের আরও দুই পর্যটকও পানিতে তলিয়ে যান। পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাঁদের জীবিত উদ্ধার করে নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন। এর মধ্যে তুহিনকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

জীবিত উদ্ধার হওয়া তুহিন (২৫) কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার মোহাম্মদ আলীর ছেলে ও হাসিবের (২৬) বাড়ি পটুয়াখালী জেলায়।

ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ আকাশ এবং তাঁর দুই বন্ধু তুহিন ও হাসিব সকালে নিকলীর হাওরে নৌকা নিয়ে ঘুরতে বের হন। ঘোরাঘুরির একপর্যায়ে সকাল ১০টার দিকে তাঁরা একসঙ্গে বেড়িবাঁধের কুর্শা এলাকায় পানিতে গোসল করতে নামেন। গোসলের একপর্যায়ে তিনজনই পানিতে তলিয়ে যান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় লোকজন ও নিকলী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আকাশকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন। এ ছাড়া তুহিন ও হাসিবকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।

কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মো. আবুজর গিফারী প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় নিকলী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তিনজনকে উদ্ধার করেন। এবারের বর্ষায় কিশোরগঞ্জ হাওরে ঘুরতে এসে বেশ কয়েকজন পর্যটক প্রাণ হারান। পর্যটকদের অসচেতনতার কারণে মূলত এসব দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন তিনি।

এ নিয়ে গত প্রায় আড়াই মাসে কিশোরগঞ্জের হাওরের বিভিন্ন জায়গায় অন্তত ২১ জনের মৃত্যু হলো। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মনসুর আলী বলেন, কিছুদিন ধরে হাওরের বিভিন্ন জায়গায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। এ কারণে সাঁতার না জেনে পানিতে না নামার জন্য এবং স্রোতে গোসল না করার জন্য আগে থেকেই কড়াকড়ি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরও অনেকেই প্রশাসনের নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে পানিতে গোসল করতে নেমে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম প্রথম আলোকে বলেন, হাওরে বারবার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরে তাঁরাও বেশ উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। পর্যটকদের বিভিন্নভাবে সতর্কতামূলক বার্তা দেওয়া হলেও নিজেদের অসচেতনতার কারণে তাঁরা জীবনকে হুমকিতে ফেলছেন। প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটারজুড়ে হাওর। সব জায়গায় তো প্রশাসনকে পাহারা দেওয়া সম্ভব না। এরপরও তাঁরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে জন্য তিনি সবার সহযোগিতা চেয়েছেন।

এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় ‘হাওরের সৌন্দর্যের টানে এসে হারাচ্ছেন প্রাণ’ শিরোনামে একটি বিশেষ প্রতিবেদন ছাপা হয়।