দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সংসদ সদস্য (এমপি) বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমানের ছোট ভাই মুশফিকুর রহমান ওরফে বাবুল। প্রচারণার শেষ সময়ে এসে তিনি তাঁর পক্ষে কাজ করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন বলে অভিযোগ করছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। অন্য দুই প্রার্থী হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ওরফে মিল্টন (মোটরসাইকেল) এবং আনারস প্রতীকের রফিকুল ইসলাম। ৫ জুন এই উপজেলায় ভোট গ্রহণ হবে। একই দিন নবাবগঞ্জ ও পার্বতীপুর উপজেলাতেও ভোট হবে।
মুশফিকুরের বড় ভাই সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান এক যুগের বেশি সময় ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি দিনাজপুর-৫ (ফুলবাড়ী-পার্বতীপুর) আসনের টানা আটবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। বিভিন্ন সময় মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
গতকাল শনিবার উপজেলার খয়েরবাড়ি, বারাইহাট, চকারবাজার, পৌর শহরের নিমতলা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকেরা। শহরের অলিতে-গলিতে মাইকে বিভিন্ন গানের সুরে প্রার্থীদের প্রচারণা চলছে। কর্মস্থল থেকে টংদোকানে প্রার্থীদের নিয়ে চলছে আলোচনা। এসব আলোচনায় ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে যেমন শঙ্কার কথা আছে, তেমনি সংসদ সদস্যের ভাই প্রার্থী হওয়ায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।
শহরের নিমতলা এলাকায় ইজিবাইকের চালক রাশিকুল ইসলাম (৪৪) প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রার্থী হয়েছেন তিনজন, তাঁদের মধ্যে একজন ডামি। ভোট না হয় পছন্দের প্রার্থীকে দিলাম, ফলাফলটা কি পক্ষে আসবে? যাঁর টাকা আছে, ক্ষমতা আছে, শক্তি আছে, ফলাফলটাও তাঁর হবে।’ ভোট দিতে যাবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পাঁচ তারিখটা আসুক বাহে, অবস্থা দেখিয়া সিদ্ধান্ত নেমো।’
উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের উপস্থিতিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় মুশফিকুর রহমানকে চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। তবে বিষয়টি মানতে না পেরে সভা ত্যাগ করেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আতাউর রহমান।
সভায় উপস্থিত থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমপি সাহেব সামনত বসি আছে। ওমহার সামনত প্রার্থীর আলাপ হওচে। কারও কি সাহস আছে তাঁর সামনত কথা বলার? বিষয়টি মানতে না পেরে বর্তমান চেয়ারম্যান উঠি যায় এবং প্রার্থী হয়।’
উপজেলা যুবলীগের নেতা মো. সবুজ বলেন, ‘নিজেকে দলীয় প্রার্থী এবং এমপির ভাই বলে পরিচয় দিয়ে সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন ঘোড়ার মার্কার প্রার্থী। তাঁর পক্ষে কাজ না করলে দল থেক বহিষ্কার করারও হুমকি দিয়েছেন কয়েকজনকে। এতে নেতা-কর্মীরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন। অথচ দলীয় প্রার্থী কিংবা এমপির ভাই পরিচয় দেওয়ার কোনো সুযোগ এই নির্বাচনে নেই।’
দলীয় নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী আতাউর রহমান। তিনি বলেন, ‘দল প্রার্থিতা উন্মুক্ত করেছে। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি; বরং দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ভোট করছেন। আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে নেতা-কর্মীদের হুমকি দিচ্ছেন। সভা-সমাবেশে এমপির মান-সম্মানের দোহাই দিয়ে ভোট চাচ্ছেন।’
নেতা-কর্মীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান প্রার্থী মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘দলের বর্ধিত সভার সিদ্ধান্তে প্রার্থী হয়েছি। ৪১ বছর ধরে রাজনীতি করছি। এমপির ভাই হিসেবে নয়, একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে নির্বাচন করছি। ব্যাপক সমর্থনও পাচ্ছি।’ সংসদ সদস্যের স্বজনদের ভোটে অংশ নিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নিষেধ করার বিষয়ে তিনি বলেন, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন, তাঁদের জন্য বিষয়টি শিথিল করা হয়েছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, ফুলবাড়ী উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৭৮ জন। দিনাজপুরে ইতিমধ্যে ১০টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থী অভিযোগ তুলতে পারেননি। ৫ জুনের নির্বাচনও একই ধারাবাহিকতায় হবে।