মেহেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৬৮ জনের নাম উল্লেখ করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে। মামলায় আরও অন্তত ১০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত জামান বাদী হয়ে জেলার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ও জেলা জজ আদালতের বিচারক মঞ্জুরুল ইমামের আদালতে মামলার আবেদন করেন। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে সদর থানাকে এজাহার নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন।
সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ছাড়াও মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন ফরহাদের স্ত্রী সৈয়দ মোনালিসা, ভগ্নিপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বাবলু বিশ্বাস, সদর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম, ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুস সামাদ, সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি মাহফুজুর রহমান, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সরফরাজ হোসেন, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনারুল ইসলাম, যুবলীগের সাবেক সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান।
মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, ৪ আগস্ট মেহেরপুর পৌর শহরে একটি সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। সমাবেশ থেকে পরদিন ৫ আগস্ট মিছিল সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ঘটনার পর জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সরফরাজ হোসেনের নির্দেশে শহরের বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনে যোগ দেওয়া শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে লাঠিপেটা করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরদিন দুপুরে ছাত্র-জনতা এক দফা দাবি নিয়ে মাঠে নামলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁদের ওপর হামলা করেন। এতে চারজন শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন আহত হন।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মারুফ আহমেদ বলেন, ১৬৮ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করা হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সদর থানাকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
একই দিনে গাংনীতে হামলার অভিযোগে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে আরেকটি মামলার আবেদন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রেজানুল হক ঈমন। আদালতের বিচারক মঞ্জুরুল ইমাম গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মামলাটি এজাহার হিসেবে নেওয়ার আদেশ দেন।
গত ৩০ জুলাই সন্ধ্যায় গাংনী উপজেলা শহীদ মিনার চত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচিতে পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা দেশি অস্ত্র, লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালিয়ে মারধর করেন। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনায় ১০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ২৫ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান, সাবেক সংসদ সদস্য আবু সালেহ মোহাম্মদ নাজমুল হক, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মৃদুল ইসলাম, ছাত্রলীগ কর্মী অনিক মোহাম্মদ, সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাহিদুজ্জামান সিপু, মজিরুল ইসলাম, কৃষক লীগের সভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহসান খান প্রথম আলোকে বলেন, সদর থানা ও গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আদালতের নির্দেশে প্রাথমিক তথ্য বিবরণী নথিভুক্ত করার কাজ শুরু করেছেন। যত দ্রুত সম্ভব আসামিদের গ্রেপ্তারে মাঠে নামবে পুলিশ।