বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে চোখ হারাতে বসেছেন আমিনুল ইসলাম (২২)। তিনি ডান চোখে দেখতে পেলেও বাঁ চোখে মোটেও দেখতে পাচ্ছেন না। গুলিবিদ্ধ হয়ে টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারছে না তাঁর পরিবার।
আমিনুলের বাড়ি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বারুহাঁস ইউনিয়নের কুসুম্বী গ্রামে। ওই গ্রামের মো. আলম হোসেনের ছেলে আমিনুল। তিনি সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির প্রথম বর্ষের ছাত্র। গত ১৬ জুলাই সিরাজগঞ্জ শহরে আন্দোলনের সময় পুলিশের ছররা গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি।
ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় প্রবল আগ্রহ আমিনুলের। কুসুম্বী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে জিপিএ-৫ ও বৃত্তি পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে বস্তুল ইসহাক উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। সেখান থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পান। পরে ঢাকার সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে রসায়ন বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হন।
বর্তমানে গুলিবিদ্ধ হয়ে বিছানায় দিন কাটছে তাঁর। প্রায় বিনা চিকিৎসায় গুলিবিদ্ধ বাঁ চোখ স্বাভাবিক না হওয়ার আশঙ্কা করছে তাঁর পরিবার। একমাত্র ছেলের অবস্থার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর মা–বাবা। ছেলের চিকিৎসার জন্য সরকার ও দেশের মানুষের কাছে সহায়তা কামনা করেন। মা-বাবা জানান, ঘটনার দিন পুলিশের ছোড়া ৩২টি রাবার বুলেট লাগে আমিনুলের শরীরে। একপর্যায়ে তাঁর বাঁ চোখেও রাবার বুলেট লাগে। সহপাঠীদের সহায়তায় তাঁকে সিরাজগঞ্জ শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৮ জুলাই ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ১৬ জুলাই সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। তখন পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট (গুলি) তাঁর কপাল, পিঠ ও চোখে লাগে। একপর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা তাঁকে উদ্ধার করে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তাঁদের সহযোগিতায় ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে একটু সুস্থ আছেন। তবে বাঁ চোখে অস্ত্রোপচার করতে হবে। কিন্তু টাকার অভাবে সেটি করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিবারের সবাই খুব চিন্তায় আছেন।
আমিনুলের বাবা মো. আলম বলেন, ‘সম্বল বলতে বাড়ির জায়গাটুকু। সংসার চলে হাঁস পালন করে। আহত ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসা ও ঝামেলা এড়াতে দৌড়ঝাঁপ করার সময় গরমে চার শতাধিক হাঁস মারা গেছে। ছেলের চিকিৎসা করার জন্য ৫০ হাজার টাকা ধার করতে হয়েছে। এখন তো সংসার চালানোই কঠিন, ছেলের চিকিৎসা করব কীভাবে?’
তাড়াশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়াদের একজন ইমন আলী কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও দেশবাসীর কাছে আমিনুলের চিকিৎসায় সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন।