মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ফাঁদ পেতে ধরা একটি মেছো বিড়াল (মেছো বাঘ) উদ্ধার করে অবমুক্ত করেছে বন বিভাগ। আজ শনিবার বেলা দুইটার দিকে উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের চণ্ডীনগর গ্রামের সামছুজ্জামানের বাড়ি থেকে মেছো বিড়ালটিকে উদ্ধার করা হয়। পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক এলাকায় এটিকে অবমুক্ত করে বন বিভাগ।
বন বিভাগ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, মেছো বিড়ালটি কয়েক দিন ধরে রাতে দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের চণ্ডীনগর গ্রামের সামছুজ্জামানের বাড়িতে হানা দিচ্ছিল। গতকাল শুক্রবার রাতে বাড়ির লোকজন মেছো বিড়ালটিকে ধরতে ফাঁদ পেতে রাখেন। আজ ভোরের দিকে সেটি ফাঁদে আটকা পড়ে। এরপর ওই বাড়ির লোকজন আজ সকালে ফোনে বন বিভাগকে মেছো বিড়াল আটকের কথা জানান। খবর পেয়ে বেলা দুইটার দিকে বন বিভাগের লোকজন ওই বাড়ি থেকে মেছো বিড়ালটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। এরপর বিকেলে সাড়ে তিনটার দিকে এটিকে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক এলাকায় অবমুক্ত করা হয়।
বন বিভাগের বড়লেখা রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস প্রথম আলোকে বলেন, বাড়ির লোকজন বলেছেন, তাঁদের হাঁস-মোরগ খেয়ে ফেলে, তাই ফাঁদ দিয়ে মেছো বিড়ালকে আটক করেছেন তাঁরা। খবর পেয়ে দ্রুত সেটি উদ্ধারের মাধবকুণ্ড ইকোপার্কে অবমুক্ত করা হয়েছে।
বন্য প্রাণী গবেষক সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থাগুলোর সংগঠন আইইউসিএন মেছো বিড়ালকে সংকটাপন্ন প্রাণী হিসেবে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। প্রাণীটি বাংলাদেশেও বিপন্ন। এগুলো আকারে গৃহপালিত বিড়ালের চেয়ে অনেকটা বড়। শরীর ঘন, পুরু লোমে আবৃত। গায়ের রং ধূসর, সঙ্গে বাদামি আভা আছে। পেটের নিচের রং সাদাটে। শরীরজুড়ে ছোপ ছোপ কালো দাগ আছে। চোখের ওপরে কপাল থেকে কানের দিকে কালো দুটি রেখা উঠে গেছে। গাল দুটি হালকা সাদাটে। এগুলোর নাক কিছুটা চওড়া, দাঁত বড়, কান গোলাকার ও অপেক্ষাকৃত ছোট।
মেছো বিড়াল জলে-স্থলে সমান শিকারি। সাধারণত খাল, বিল, নদী, পুকুর ও জলাভূমিসংলগ্ন স্থানে বসবাস করে। এগুলো মাছ, সাপ, ব্যাঙ, ইঁদুর, পাখি, খরগোশ, গুইসাপসহ মাঝারি আকারের অনেক প্রাণী শিকার করে। পানিসংলগ্ন ঝোপ, কচুরিপানার ভেতরে এগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা চুপ করে শিকারের আশায় বসে থাকতে পারে।
মেছো বিড়াল নিশাচর। দিনে ঘন ঝোপ, গাছের প্রশস্ত ডাল, গর্তে ঘুমিয়ে কাটায়। স্ত্রী মেছো বিড়াল প্রায় ৭০ দিন গর্ভধারণের পর ১ থেকে ৪টি বাচ্চা প্রসব করে। বাচ্চারা ৯ মাস পর্যন্ত মায়ের সঙ্গে থাকে। প্রাকৃতিক জলাভূমি কমার কারণে এগুলোর সংখ্যা কমে আসছে। মেছো বিড়াল বেশির ভাগ সময়ই মরা ও রোগাক্রান্ত মাছ খেয়ে জলাশয়ে মাছের রোগ নিয়ন্ত্রণ করে।