মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা আইরিন আক্তার। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঢাকার নবাবগঞ্জ থানায়
মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা আইরিন আক্তার। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঢাকার নবাবগঞ্জ থানায়

‘তোমরা আমার মেয়ারে আইনা দাও’

‘বাবা, তোমরা কারা? আমার মেয়ারে আইনা দাও। কী অপরাধে আমার মেয়ারে ওরা মেরে ফেলল।’ গতকাল শুক্রবার দুপুরে নবাবগঞ্জ থানা চত্বরে এভাবেই বিলাপ করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন আইরিন আক্তার। তিনি অপহরণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক রেহানা পারভীনের মা।

সংবাদকর্মীদের দেখে কাঁদতে কাঁদতে আইরিন আক্তার বলেন, ‘আমার মেয়া ব্যারিস্টার হতে বিদেশে গিয়েছিল। আমার স্বপ্ন পূরণ হইল না। আমি আমার মেয়ার খুনিদের ফাঁসি চাই।’

নিহত রেহানা পারভীন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার পাতিলঝাপ গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য লেহাজ উদ্দিন ও আইরিন আক্তারের মেয়ে। ঢাকার পাশে সাভারের আশুলিয়ায় রেহানা পারভীনকে স্বামীর যোগসাজশে অপহরণের পর হত্যা ও গুম করার অভিযোগ পাওয়া যায়। ঘটনার প্রায় দুই মাস পর তাঁর লাশ খুঁজে পায় পুলিশ। রেহানাকে হত্যা ও গুমের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্বজন সূত্রে জানা যায়, রেহানা পারভীনকে হত্যা ও গুমের পরিকল্পনাকারী তাঁর স্বামী আওলাদ হোসেন। স্ত্রীকে হত্যা করেই তিনি ঠান্ডা মাথায় পালিয়ে যান অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে পৌঁছেই শ্বশুর-শাশুড়িকে ফোন করে রেহানা কোথায় আছেন, কেমন আছেন জানতে চান। এরপরই রেহানার মা–বাবা মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেন। তাঁকে খুঁজে না পেয়ে মা আইরিন আক্তার গত ৩১ আগস্ট নবাবগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ ও বাংলাদেশে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন ইন্টারপোলের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরে রেহানার তথ্য চেয়ে বার্তা পাঠায়। তখন পুলিশ ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনে কাজ শুরু করে। পরে ৮ সেপ্টেম্বর নবাবগঞ্জ থানা-পুলিশ অপহরণ মামলা নেয়।

একপর্যায়ে দোহার সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আশরাফুল আলম তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে রেহানার ননদ পাপিয়া আক্তারের সন্ধান পান। পাপিয়াকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে রেহানা হত্যার মূল রহস্য বের হয়ে আসে। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সহযোগী আমজাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিহত রেহানার মুঠোফোনের কল রেকর্ডের তথ্যানুসারে তাঁকে জুলাইয়ের ৪ অথবা ৫ তারিখে হত্যা করা হয় বলে পুলিশ ধারণা করে। পরে আশুলিয়া থানার নয়াহাটি মৌনদিয়া চৌরাপাড়া এলাকায় রেহানার ননদের বাড়ির পাশে মাটিতে তাঁর লাশ পুঁতে রাখা হয়। ঠান্ডা মাথায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে স্বামী আওলাদ হোসেন একাই অস্ট্রেলিয়া চলে যান ১৩ জুলাই।

নিহত রেহানার বাবা লেহাজ উদ্দিন বলেন, মেয়ের স্বামী আওলাদ একজন লোভী প্রকৃতির মানুষ। তিনি পরনারীর প্রতিও আকৃষ্ট ছিলেন। এ নিয়ে তাঁর মেয়ের সঙ্গে আওলাদের সম্পর্কের টানাপোড়ন চলে।

আওলাদ হোসেনের মা আছিয়া বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের সঙ্গে পরিবারের সম্পর্ক নেই প্রায় ১৮ বছর। ছেলে স্ত্রীর কথামতো চলে, তার উপার্জনের সব টাকায় কেনা সম্পত্তিও বউয়ের নামে দিয়েছে। দীর্ঘ ১৮ বছর পর দেশে ফিরেও আমার কাছ থেকে জমি লিখে নেয়। এরপর ছেলে কোথায় গেছে, কী করছে, তা জানি না।’