সকাল ৯টায় শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু এর আগেই তারা আসতে শুরু করে। নির্ধারিত সময়ের আগেই পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শহীদ আব্দুস সাত্তার মিলনায়তনের ভেতরটা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। যেন তিলধারণের ঠাঁই নেই। বসার আসন পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই তখন দাঁড়িয়ে থাকেন।
এখানেই আজ সোমবার উৎসবমুখর পরিবেশে শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রথম আলোর আয়োজনে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকাল সাড়ে আটটার আগেই শিক্ষার্থীদের হইহুল্লোড়ে সেখানে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। সহপাঠীরা একে অপরকে দেখে জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করে। কেউ ফটোফ্রেমে ছবি তোলে, কেউ তোলে সেলফি। কেউ স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে গল্প-আড্ডায় মেতে ওঠে। বিদ্যালয়ের পাট চুকানোর কয়েক মাস পর সহপাঠী ও বন্ধুদের দেখা পেয়ে তারা ভীষণ উচ্ছ্বসিত। সঙ্গে অনেকের অভিভাবকও আসেন।
অভিভাবকদের উৎসাহও ছিল চোখে পড়ার মতো। উৎসবে যোগ দিতে পাবনার বিভিন্ন উপজেলার জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ১ হাজার ৬০৬ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করে। সকাল ৯টায় নির্ধারিত বুথ থেকে ক্রেস্ট, স্ন্যাক্স ও উপহার সংগ্রহের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের মূল মিলনায়তনের বাইরে অভিভাবকেরা বসে ছিলেন। তাঁরা বিনা মূল্যে সোমবারের প্রথম আলো পত্রিকা পড়েন।
১০টায় বন্ধুসভার বন্ধুদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান পর্ব। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে গলা মেলায় শিক্ষার্থী ও অতিথিরা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর পাবনা প্রতিনিধি সরোয়ার মোর্শেদ।
অনুষ্ঠানে অতিথির বক্তব্যে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. আবদুল আউয়াল বলেন, ‘শুধু ভালো ফল করলেই চলবে না, সবার আগে ভালো মানুষ হতে হবে। নিজেকে ভালোবাসতে হবে। দেশকে, পরিবারকে ভালোবাসতে হবে। তবে ভালো ফলের সঠিক মূল্যায়ন আসবে।’
পাবনা সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আখতার জামান বলেন, ‘আগামী দিনের বাংলাদেশ তোমরাই। পুরো দেশ তোমাদের দিকে তাকিয়ে। তাই সাফল্যর ধারা অব্যাহত রেখে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।’
প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘শুধু পুরস্কারের জন্য দৌড়ালে চলবে না। জীবনের জন্য দৌড়াতে হবে। কারণ, জীবনের জন্য দৌড়ালেই লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ হয়। তোমরা সেই কাজ করবে বলেই আমরা প্রত্যাশা করি।’
অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য দেয় পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া মার্জিতা মাহজাবিন। সে বলে, ‘আমরা আজ নতুন আলোয় উদ্ভাসিত, পারি দিতে যাচ্ছি তীরহারা এক ঢেউয়ের সাগর। বিস্তীর্ণ এই পথ পাড়ি দিতে নানা প্রতিকূলতা রয়েছে। এই সংবর্ধনা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা হয়ে রইল।’
‘স্বপ্ন দেখো, জীবন গড়ো’ স্লোগানে সারা দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর পৃষ্ঠপোষকতায় চলছে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই বিকাশ এবং সহযোগিতায় থাকছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বহুব্রীহি, সানকুইক, কনকা-গ্রি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।
উৎসবে কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০ জন গুণী শিক্ষককে সম্মাননা জানানো হয়। সম্মাননা পাওয়া শিক্ষকেরা হলেন পাবনা জেলা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তুষার কুমার দাস, সরকারি আরসিএন অ্যান্ড বিএসএন মডেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আতাউর রহমান, সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মেহের সুলতানা, সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. তালেবুর রহমান, কালেক্টরেট পাবলিক স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মাহমুদুল হক, জেলা স্কুলের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক আদ্যনাথ ঘোষ, পুলিশ লাইনস স্কুলের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মাহবুব আলম, স্কয়ার হাইস্কুলের শিক্ষক মমতাজ মম, সেলিম নাজির উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসিনা আক্তার ও ব্র্যাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশিদুল ইসলাম। তাঁদের সম্মাননা ক্রেস্ট দেওয়ার পাশাপাশি উত্তরীয় পরিয়ে দেন বন্ধুসভার বন্ধুরা। হাসিনা আক্তার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি। তাঁর সম্মাননা স্মারক পৌঁছে দেওয়া হবে।
সম্মাননা পাওয়ার পর পাবনা জিলা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তুষার কুমার দাশ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের এগিয়ে যেতে হবে, দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। এই সংবর্ধনা সেই এগিয়ে যাওয়ার পথে অনেকটাই অনুপ্রেরণা হবে বলে আমি মনে করি।’
দিনব্যাপী এই আয়োজনে শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল ক্রেস্ট, ডিজিটাল সার্টিফিকেট, শিখোর পক্ষ থেকে বিশেষ শিক্ষাবৃত্তি, ফ্রেশ ব্র্যান্ডের স্ন্যাক্স, সানকুইকের ফ্রুট জুস, প্রথম আলো ই-পেপার (তিন মাস) ফ্রি সাবস্ক্রিপশন, প্রথমা ডটকমে অনলাইনে বই অর্ডারে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়, প্রথমা প্রকাশনের বিক্রয়কেন্দ্রে প্রথমা প্রকাশন ও প্র-প্রকাশনের প্রকাশিত বইয়ে ৩০ শতাংশ ছাড়, কিশোর আলো ও বিজ্ঞানচিন্তার ছয় মাসের প্রিন্ট সংস্করণের সাবস্ক্রিপশনে বিশেষ ছাড়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে চলে গান ও নৃত্য। গান পরিবেশন করেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ফাহমিদা চাঁদনী, শিল্পী রেজওয়ান রাতিন ও অভিজিৎ নীরব। নৃত্য পরিবেশন করেন রেশমা আক্তার। বন্ধুসভার সভাপতি নাহিদুজ্জামানের ধন্যবাদ প্রদানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।