বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্মৃতিচিহ্ন দেয়ালে দেয়ালে ফুটিয়ে তুলেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিক্ষার্থীরা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্মৃতিচিহ্ন দেয়ালে দেয়ালে ফুটিয়ে তুলেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিক্ষার্থীরা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি-স্লোগান

‘আমরা নতুন দেশ গড়ব’, ‘‍বুকের ভেতর দারুণ ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’, ‘পানি লাগবে? পানি’, ‘রুখে দাও ষড়যন্ত্র’ এমন নানা স্লোগান ও গ্রাফিতিতে সাজছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দেয়ালগুলো। দল বেঁধে শিক্ষার্থীরা দেয়ালে দেয়ালে তুলে ধরছেন নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়, অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের কাউতলী কলেজপাড়া হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সামনের অংশ দক্ষিণ মৌড়াইল পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার দেয়াল গ্রাফিতি–স্লোগানে পূর্ণ। এই অংশে থাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বাংলোর সীমানাপ্রাচীর, গণপূর্তের কার্যালয়, সড়ক ও জনপথ বিভাগের ডাকবাংলো, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের সীমানাপ্রাচীর শিক্ষার্থীরা দলে দলে রাঙিয়ে দিচ্ছেন।

রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, দেয়ালগুলোর নোংরা পরিষ্কার করে তাতে আঁকা হচ্ছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের গৌরবময় নানা গ্রাফিতি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের দক্ষিণ মৌড়াইল এলাকায় অবস্থিত খ্রিষ্টিয়ান ব্যাপ্টিস্ট চার্চের সীমানাপ্রাচীরে আঁকা ‘স্বাধীনতার সূর্যোদয়’ কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

এটি এঁকেছেন জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) বিভাগের ছাত্র মোহাম্মদ ওমর ও ঢাকার জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদ্রাসার একই বিভাগের ছাত্র উসাইদ মোহাম্মদ। মোহাম্মদ ওমর জেলার নবীনগর উপজেলার বড়াইল গ্রামের বাসিন্দা। তিনি শহরের মুন্সেফপাড়ায় বসবাস করেন। উসাইদ মোহাম্মদ ঢাকার লালবাগের বাসিন্দা।

উসাইদ মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাকগ্রাউন্ডে সবুজ রং দিয়েছি, যা আমাদের সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশের পরিচয় বহন করে। জরাজীর্ণ অবস্থায় মাত্র দেশে নতুন সূর্য উদয় হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসা, চার্চের চিত্র। এখানে কোনো বৈষম্য রাখিনি।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের গণিত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী পাপিয়া সুলতানা, মায়েদা খানম ও ফারিয়া জাহান বলেন, বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে। মুক্ত বাতাসের অনুভূতি দেয়ালে রাঙানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা, যাতে সবাই আন্দোলনের চিত্র কিছুটা হলেও বুঝতে পারে।  

দেয়ালগুলোর নোংরা পরিষ্কার করে তাতে আঁকা হচ্ছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের গৌরবময় নানা গ্রাফিতি

আযযুহরী ক্যালিগ্রাফি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছয়জন ছাত্রকে নিয়ে বাংলা, ইংরেজি ও আরবি গ্রাফিতি এঁকেছি। অবকাশ এলাকায় ৫০০ ও ২৫০ বর্গফুটের দুটি গ্রাফিতিসহ ইংরেজিতে ফ্রিডম অব স্পিচ শিরোনামে একটি গ্রাফিতি এঁকেছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা সাবরিনা জেবিন বলেন, ‘স্বৈরাশাসন থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে। নতুন চিন্তাভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। নতুন স্বাধীনতার আনন্দচিহ্ন দেয়ালে ফুটিয়ে তুলতেই আমরা দেয়াল রঙিন করছি।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম বলেন, বর্তমান বাংলাদেশে তারুণ্যের জয়গান হচ্ছে। সেই তারুণ্যকে সামনে রেখেই ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে রঙিন করার পরিকল্পনা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের স্নাতক মানসুরা কবীর বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা দেয়ালে তুলে ধরছি। দেয়ালের কলম তরবারির চেয়েও শক্তিশালী এবং দেশে মেধার বিজয় হয়েছে, সেটা রাঙিয়েছি। দুই দিন ধরে আমরা এখানে কাজ করছি। দেশকে আবার নতুনভাবে সাজানোর জন্য আমরা কাজগুলো করছি।’