সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা হওয়া গ্রাম পরিদর্শন করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধিদল। পরিদর্শনের পর স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে তাঁরা হামলার ঘটনায় বিচারের দাবি করেন।
আজ শনিবার সকালে মংলারগাঁও গ্রামে আসেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। তাঁরা গ্রাম ঘুরে দেখেন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আইনজীবী মানজুর আল মতিন, প্রীতম দাশ, তাজনুভা জাবিন ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা আলাপকালে আইনজীবী মানজুর আল মতিন বলেন, যাঁরা হিন্দু ভাইদের বাড়িঘরে হামলায় জড়িত, তাঁদের বিচার হওয়ার দরকার, তাঁদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। যাঁরা হামলা করেছেন, তাঁরা গোটা দেশের ঐক্য ও সম্প্রীতি রক্ষার যে চেষ্টা, সেটাকে বাধাগ্রস্ত করছেন। তাঁদের চিহ্নিত করতে হবে। তিনি বলেন, ‘যিনি কোরআন অবমাননা করেছেন, তাঁরও বিচার নিশ্চিত হওয়া জরুরি। না হলে এ ধরনের আবেগকে কেন্দ্র করে মানুষকে বিপথে নেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এটা কোনোভাবে হতে দেওয়া যাবে না।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য মানজুর আল মতিন আরও বলেন, ‘স্থানীয় হিন্দু ভাইয়েরা আমাদের বলেছেন, যখন ক্ষুব্ধ জনতা হামলা করতে আসে, তখন এলাকার ইমামসহ আরও লোকজন তাঁদের বাড়িঘর রক্ষায় এগিয়ে আসেন। এই উদাহরণগুলো সারা বাংলাদেশে সৃষ্টি করতে হবে। ভাই হয়ে ভাইয়ের পাশে সব সময় দাঁড়াতে হবে।’
বাংলাদেশে মুসলমান-হিন্দু পরস্পরের ভাই মন্তব্য করে মানজুর আল মতিন বলেন, ‘মোরা এক বৃন্তে দুটো কুসুম হিন্দু-মুসলমান। ফলে সবার পাশে সবাইকে দাঁড়াতে হবে। যে ইমাম সাহেব হামলা থেকে রক্ষায় এগিয়ে এসেছিলেন, এ রকম আরও অনেক মানুষ আছেন। মনে রাখতে হবে, একজন ব্যক্তি ঘটনার জন্য দায়ী। তাঁকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আমরা মনে করি তাঁর বিচার হবে। একজনের জন্য সব হিন্দু দায়ী নন। শেখ হাসিনা তো মুসলমান ছিলেন, তাই তাঁর গণহত্যার জন্য সব মুসলমান দায়ী নন।’
মানজুর আল মতিন বলেন, বাংলাদেশ এখন ঐক্যের বাংলাদেশ। হিন্দু-মুসলমান সবার বাংলাদেশ। এই গ্রামের ঘটনা নিয়ে ভারতীয় অনেক গণমাধ্যম মিথ্যা ও গুজব চড়াচ্ছে। এই মিথ্যা প্রতিরোধে সত্যই হোক হাতিয়ার। তিনি বলেন, ‘আমরা সত্য দিয়ে মিথ্যাকে রুখে দাঁড়াব। সত্যই হোক আমাদের হাতিয়ার।’
এক কিশোরের ফেসবুকে একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে গত মঙ্গলবার রাতে মংলারগাঁও গ্রামে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ওই কিশোরকে আটক করেছে। পরদিন পুলিশ বাদী হয়ে করা সাইবার নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পুলিশের ভাষ্য, ওই কিশোর মঙ্গলবার বিকেলে ফেসবুকে আরেকজনের পোস্টের মন্তব্যের ঘরে পবিত্র কোরআন অবমাননা করেছে অভিযোগ করে স্থানীয় কিছু লোকজন রাতে মিছিল করেন। ঘটনা জেনে পুলিশ আগেই কিশোরকে হেফাজতে নেয়। মিছিল থেকে উত্তেজিত জনতা ওই কিশোরের বাড়িসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২০-২৫টি বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা করে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।