কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় শিশু হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় এলাকাবাসী আতঙ্কিত। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের আদাবাড়িয়া গ্রামে
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় শিশু হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় এলাকাবাসী আতঙ্কিত। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের আদাবাড়িয়া গ্রামে

কুষ্টিয়ার কুমারখালী

ঘুমন্ত শিশু হারানোর ঘটনায় আতঙ্কিত এলাকাবাসী, স্বজনদের কান্না থামছেই না

মায়ের সঙ্গে নানাবাড়ি বেড়াতে এসে ঘুমন্ত অবস্থায় হারিয়ে গেছে আড়াই মাস বয়সী শিশু ইসরাফিল শেখ। উঠানে চেয়ারে বসে শোকে নির্বাক মা-বাবা। পাশে মাটিতে বিছানো পাটিতে বসে আহাজারি করছেন নানা-নানি। তাঁদের ঘিরে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন স্বজনেরা। মাঝেমধ্যে ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠছেন মা-বাবা, নানা-নানি। তাঁদের আহাজারিতে ছুটে আসা মানুষও শোকে মুহ্যমান।

গতকাল সোমবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের আদাবাড়িয়া গ্রামে নানা মোহন মণ্ডলের ঘর থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় শিশুটি হারিয়েছে। শিশুটি উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের আনন্দনগর গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমান ও গৃহিণী রেহেনা খাতুনের ছেলে।

তিন কন্যাসন্তানের পর একমাত্র ছেলেসন্তান পেয়ে খুশি হয়েছিলেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। তবে হারিয়ে যাওয়ায় আবার দুঃখের ছায়া নেমে এসেছে সবার মধ্যে। এ ঘটনায় আতঙ্কিত এলাকাবাসী। এদিকে শিশু চুরিতে জড়িত সন্দেহে শিশুটির মামা নয়ন মণ্ডলকে (৩৫) আটক করেছে পুলিশ।

স্বজন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা ১১টার দিকে ছেলে ইসরাফিলকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসে রেহেনা। রাতে শিশু ইসরাফিল, মা রেহেনা ও নানি রেনু খাতুন দরজায় খিল (লক) না লাগিয়ে ঘুমিয়েছিল। হঠাৎ রাত ১০টার দিকে ঘুম ভেঙে রেহেনা দেখেন, তাঁর ছেলে নেই। তখন তাঁর চিৎকার-চেঁচামেচিতে স্বজন ও প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন এবং সম্ভাব্য স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। আজ মঙ্গলবার এলাকায় মাইক দিয়ে প্রচার করা হয়েছে।

আজ দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, শিশুটির সন্ধানে এলাকায় প্রচার করা হচ্ছে। নানার বাড়িতে উৎসুক জনতা ও স্বজনদের ভিড়। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নানা-নানি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছে পুলিশ।

মা রেহেনা খাতুন ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বলেন, ‘শরীরে খুব জ্বর। রাত ১০টার দিকে ঘুম ভেঙে ছেলেকে না পেয়ে চিৎকার দিয়ে উঠি। এরপর সবাই এসে রাস্তায়-মাঠে খোঁজাখুঁজি করেও পেল না। ছেলে কোথায় গেছে, তা শুধু আল্লাহ জানে।’ বাবা জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আমার মাথা ঠিক নাই। কিছু জানিনে। খুব আদরের ছেলে আমার। আমি ছেলে ফেরত চাই।’

নানি রেনু খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গরমের মধ্যে শুয়ে ছিলাম। ওর মা চেঁচামেচি দিয়ে ওঠে। কিডা যে নিয়ে গেল মুনি, কিছু জানিনে।’ আটক নয়নের স্ত্রী ও শিশুটির মামি জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, তাঁরা সবাই মিলে রাত থেকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন। কিন্তু কোথাও পাননি। পুলিশ অযথা তাঁর স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছেন।

এদিকে শিশু হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আতঙ্কিত এলাকাবাসী। তাঁরা এলাকার নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা রাজিনা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন ঘটনা কোনো দিন ঘটেনি। খবর শোনার পর থেকেই আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসতেছে। সবাই খুব ভয়ে আছে।’

এ ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আকিবুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাচ্চা হারানোর খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।