কুষ্টিয়ায় সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া ৬ সাংবাদিকের ওপর হামলা, থানায় অভিযোগ

কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে একটি স্পিডবোটে কয়েকজন এসে হামলা ও হুমকি–ধমকি দেয় সাংবাদিকদের
ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ছয় সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছেন। আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর এলাকায় পদ্মা নদীতে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের অভিযোগ, মারতে উদ্যত হয়ে তাঁদের ভয়ভীতি দেখানো ও হুমকি দেওয়া হয়েছে। ভিডিও করার সময় ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ঘটনার পর তাঁরা শহরে ফিরে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দুপুর ১২টার দিকে বেসরকারি টেলিভিশন নিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রতিনিধি জাহিদুজ্জামান, বাংলাভিশনের প্রতিনিধি হাসান আলী, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের স্টাফ রিপোর্টার শরীফ বিশ্বাস, এনটিভির প্রতিনিধি সাবিনা ইয়াসমীন ও তাঁদের ক্যামেরা পারসনসহ ছয়জন সাংবাদিক স্পিডবোট নিয়ে হরিপুরে পদ্মা নদীর মাঝে ভবানীপুর এলাকায় যান।

স্পিডবোটের চালক ডিপজল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ছয় সাংবাদিক বালু উত্তোলন এলাকায় যান। সেখানে ৫০ থেকে ৭০টি নৌকায় বালু তোলা হচ্ছিল। সেই বালু তোলার ভিডিও ধারণ করছিলেন সাংবাদিকেরা। একপর্যায়ে কয়েকজন ক্যামেরা পারসন বালু উত্তোলনের নৌকায় উঠে শ্রমিকদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন। এ সময় দ্রুতগতিতে একটি স্পিডবোট এসে সাংবাদিকদের স্পিডবোটে ধাক্কা দেয়। এতে নারী সাংবাদিক পড়ে যাওয়ার উপক্রম হন এবং স্পিডবোটের সামনে আঘাতে সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় তেড়ে আসা স্পিডবোটে থাকা পাঁচ-ছয়জন উচ্চ স্বরে হুমকিধমকি দিতে থাকেন এবং গালিগালাজ করেন। এ সময় তাঁরা বারবার তেড়ে এসে মারতে উদ্যত হলেও কারও শরীরে আঘাত করেননি। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে এসব চলে। তাঁরা একপর্যায়ে পদ্মার পাড়ে কলাবাগানের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে কৌশলে তাঁরা সেখান থেকে দ্রুত চলে আসেন।

কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সংবাদ সংগ্রহে গেলে সাংবাদিকদের বাধা দেওয়া হয়

থানায় দেওয়া অভিযোগে সাংবাদিক জাহিদুজ্জামান উল্লেখ করেন, তাঁরা ছয়জন সাংবাদিক পদ্মা নদীর অবৈধ বালু উত্তোলনের সংবাদ সংগ্রহে যান। এ সময় মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হান্নানের নির্দেশে তাঁর ক্যাডার বাহিনী হামলা চালায়। তাঁদের ওপর গুলিবর্ষণ করে এবং ধাক্কা দিয়ে স্পিডবোট ডোবানোর চেষ্টা করে। ক্যামেরা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয় এবং তাঁদের অপহরণ করার চেষ্টা চালায়। হামলাকারীরা তাঁদের উদ্দেশে বলে, ‘বৈধভাবে আবদুল হান্নান ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলন করছে। পদ্মাপাড়ে কলাবাগানের ভেতর নিয়ে হিসাব-নিকাশ করে ছেড়ে দেওয়া হবে।’ পরে তাঁরা তীরে চলে আসেন।

সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে অভিযোগের বিষয়ে তালবাড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হান্নানের মুঠোফোন নম্বরে অন্তত চারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি সাড়া না দেওয়ায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার আওতাধীন পদ্মা নদীর কোথাও কোনো বালু উত্তোলনের ইজারা দেওয়া হয়নি। যদি কেউ তুলে থাকে, তারা অবৈধভাবে তুলছে। এ ব্যাপারে বেশ কয়েকবার অভিযানও চালানো হয়েছে।