দিনবদলের স্বপ্ন নিয়ে সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন রাকিব হোসেন (২২) । কিন্তু দিনবদল হয়নি তাঁর। সেই স্বপ্নও রয়ে গেছে অধরা। অবশেষে আজ শুক্রবার ভোরে স্বপ্ন পূরণের দেশ থেকে বাড়িতে ফিরেছেন তিনি। তবে দেহে প্রাণ নিয়ে নয়, লাশ হয়ে।
৩ এপ্রিল সিঙ্গাপুরে একটি বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ করার সময় রড চাপা পড়ে রাকিব মারা যান। সেখানে তিনি শ্রমিকের কাজ করতেন। আজ ভোরে তাঁর মরদেহ বাড়িতে পৌঁছায়। সকাল ৯টায় যশোরের শার্শা উপজেলার নারায়ণ গ্রামের ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে রাকিব হোসেনের মরদেহ পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়।
রাকিব হোসেনের বাড়ি উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী মমিনুর রহমানের ছেলে। মমিনুর রহমানের দুই ছেলে। বড় ছেলে রাকিব হোসেন। ২০২১ সালে তিনি সিঙ্গাপুর যান। ছোট ছেলে তৌফিক হোসেন(১৪)। সে উপজেলার বেনাপোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্র। চার কাঠা কেনা জমির ভিটায় তিন কক্ষের নির্মাণাধীন ঘর মমিনুর রহমানের। জমিজিরাত বলতে মাঠে দেড় বিঘা ধানের জমি। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে গত বুধবার মালয়েশিয়া থেকে বাড়ি ফিরেছেন মমিনুর রহমান।
মমিনুর রহমান জানান, প্রায় দুই বছর আগে শ্রমিক ভিসায় সিঙ্গাপুরে যান রাকিব। এর আগে সে মালয়েশিয়ায় ছিলেন। সেখানে এক বছর থেকে গত বছরের মাঝামাঝি বাড়িতে আসেন রাকিব। বাড়িতে প্রায় ছয় মাস থেকে গত জানুয়ারি তিনি আবার সিঙ্গাপুর যান। সেখানে তিনি বহুতল ভবনে নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতেন। গত ৩ এপ্রিল বিকাল পাঁচটার দিকে ভবনের ওপরে রডের বান্ডিল তোলার সময় দড়ি ছিঁড়ে এর নিচে চাপা পড়েন। সেখান থেকে সিঙ্গাপুর সিভিল ডিফেন্স ফোর্সের উদ্ধারকর্মীরা উদ্ধার করে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে। ১৮ দিন চিকিৎসাধীন থেকে ২০ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে রাকিব মারা যান।
মমিনুর রহমান বলেন,‘অভাবের সংসার। অনেক কষ্ট করে দায়দেনা করে ছেলেটাকে সিঙ্গাপুর পাঠিয়েছিলাম। এখনও অনেক টাকা দেনা আছি। তা ছাড়া লাশ দেশে আনতে আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। আমি এখন কী নিয়ে বাঁচব? আর কী করেই বা ধারদেনা শোধ করব।’