বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচির মধ্যে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে পৌরসভা কার্যালয়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ভূমি অফিস ও কৃষি অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পৌরসভা কার্যালয়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে রাখা দুটি গাড়ি। এ ছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের মালিকানাধীন বিপণিবিতানেও হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। আজ রোববার বেলা সাড়ে তিনটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে চৌরাস্তা এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকজন আহত হন। এর মধ্যেই আন্দোলনকারীদের একটি অংশ বেগমগঞ্জ থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং ভেতরে ঢোকার চেষ্টা চালায়। তখন ভেতরে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল হাসান মাইকে আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে শান্ত করেন।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে হাজারো আন্দোলনকারী চৌরাস্তায় বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তাঁরা চৌরাস্তাসংলগ্ন চৌমুহনী পৌরসভা ভবনের সামনে দুটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন। পরে পৌরসভা ভবনের ভেতরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপর বিক্ষোভকারীরা চৌমুহনী বাজারে যান। সেখানে তাঁরা সমবায় মার্কেট, কিরণ ইম্পেরিয়ার নামের দুটি প্রতিষ্ঠানে হামলা চালান। পরে বিক্ষোভকারীরা চৌমুহনী রেলগেট–সংলগ্ন নোয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের মালিকানাধীন বিপণিবিতান ‘মোরশেদ আলম কমপ্লেক্স’-এ হামলা ও ভাঙচুর করেন।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, হামলাকারীরা সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে চৌমুহনী চৌরাস্তা এলাকার দিঘিরপাড়ে অবস্থিত বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে আগুন নেভান।
বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, একদল বিক্ষোভকারী সকাল থেকে একাধিকবার থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। বিকেলে চৌমুহনী পৌরসভা ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের খবর তাঁরা পেয়েছেন। কিন্তু থানা রক্ষায় তাঁদের থানার ভেতরে অবস্থান করতে হয়েছে। বিকেলে বিক্ষোভকারীরা তাঁর কার্যালয়েও হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
এদিকে সন্ধ্যায় বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ভূমি অফিস ও কৃষি অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়। এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকের মাইজদী কোর্ট শাখায় ইটপাটকেল ছোড়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক সমন্বয়কের কাছে হামলা ও ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, বেগমগঞ্জের চৌমুহনীতে সহিংস ঘটনার সঙ্গে তাঁদের আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। শিক্ষার্থীদের অসহযোগ আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে অন্য কেউ পরিকল্পিতভাবে ঘটনা ঘটিয়ে থাকলে সেটির দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেবে না। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দুপুরের পরই বাড়িতে ফিরে গেছেন।