খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রারসহ ৬৭ জনের পদত্যাগ

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী উপাচার্য মাহমুদ হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাহমুদ হোসেন পদত্যাগ করেছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া গত কয়েক দিনে এক সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ৬৭ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদত্যাগপত্রে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ উল্লেখ করেছেন। এর আগে তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পদত্যাগের সিদ্ধান্তের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

উপাচার্যসহ উল্লেখযোগ্য আরও যারা পদত্যাগ করেছেন তাঁরা হলেন সহ–উপাচার্য মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, কোষাধ্যক্ষ অমিত রায় চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার খান গোলাম কুদ্দুস, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি হলের প্রাধ্যক্ষ, সিন্ডিকেটের দুজন সদস্য, শারীরিক শিক্ষা চর্চা বিভাগের পরিচালক, ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স সেলের (আইকিউএসি) পরিচালক ও দুই অতিরিক্ত পরিচালক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক।

এর আগে ১১ আগস্ট খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক মো. শরীফ হাসান লিমন ও আটজন ছাত্রবিষয়ক সহকারী পরিচালক একযোগে পদত্যাগ করেন। ১১ আগস্ট দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে তাঁরা তাঁদের পদত্যাগপত্র জমা দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার খান গোলাম কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রারসহ সব হলের প্রভোস্ট ও প্রকল্প পরিচালক, মানে আমরা প্রশাসনিক পদধারী সবাই পদত্যাগ করেছি। কারণ হিসেবে সবাই প্রায় ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়েছেন।’

২০২১ সালের ২৫ মে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন মাহমুদ হোসেন। এ ছাড়া মোসাম্মাৎ হোসনে আরা ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর সহ–উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন। কোষাধ্যক্ষ হিসেবে অমিত রায় চৌধুরী ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট যোগদান করেন।

এর আগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে পদত্যাগ করা থেকে বিরত রাখতে বিক্ষোভ করেন। গত রোববার ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মাহমুদ হোসেন পদত্যাগ করছেন’—এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। পরে রোববার বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে সমবেত হয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ ঠেকাতে বিক্ষোভ করেন। এ সময় প্রশাসনিক ভবনসংলগ্ন এলাকায় তাঁরা নানা স্লোগান দেন। এ নিয়ে ১৮ আগস্ট প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘উপাচার্যের পদত্যাগ ঠেকাতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যদের পদত্যাগের দাবি তুলছেন শিক্ষার্থীরা। ইতিমধ্যে ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগরসহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পদত্যাগ করেছেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এর ব্যতিক্রম হওয়ার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে উপাচার্য মাহমুদ হোসেনের ভূমিকা ছিল শিক্ষার্থীদের পক্ষে। তিনি আন্দোলন চলাকালে ক্যাম্পাসে কোনো পুলিশ ঢুকতে দেননি। ‘আমার ক্যাম্পাসে কোনো পুলিশ প্রশাসন ঢুকতে পারবে না; এখানে আমিই প্রশাসন’—আন্দোলনের সময় উপাচার্যের এমন একটি বক্তব্যের কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল।