বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবিতে চলা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গতকাল রোববার দিনভর বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ছয় হয়েছে। গতকাল রাতে দুপচাঁচিয়া উপজেলার কলেজছাত্র মনিরুল ইসলামের (২২) মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়।
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ছয়জনের মৃতুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ।
ছয়জনের মধ্যে তিনজনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হলেন বগুড়া সদরের হরিগাড়ি এলাকার শিক্ষক সেলিম রেজা (৪৫), গাবতলীর গোড়দহ গ্রামের জিল্লুর রহমান (৩৫) ও দুপচাঁচিয়া উপজেলার কলেজছাত্র মনিরুল ইসলাম (২২)। বাকি তিনজনের মধ্যে একজনের বয়স আনুমানিক ৪৫ বছর, একজনের বয়স ৬০ বছর এবং অন্যজনের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি।
দুপচাঁচিয়া উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সেলিম উদ্দিন বলেন, সংঘর্ষে নিহত কলেজছাত্র মনিরুল ইসলামকে কাহালু উপজেলার বীরকেদার গ্রামে দাফন করা হয়েছে।
এদিকে বিক্ষোভকারীরা বগুড়া শহরের কালিতলা এলাকায় বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসানের বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। পরে দুপচাঁচিয়া থানা ঘেরাও করেন আন্দোলনকারীরা। পুলিশ দুপুর ১২টার দিকে অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই কলেজছাত্র মনিরুল ইসলাম নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন ৫ জন। আহত হন ৪৪ জন। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা কলেজছাত্র মনিরুলের লাশ নিয়ে মিছিল বের করে। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় ও তাঁর বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে হামলাকারীরা। তাঁর বাসভবনের গ্যারেজে ইউএনও ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দুটি সরকারি পাজেরো গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
দুপচাঁচিয়ার ইউএনও জান্নাত আরা তিথি বলেন, ‘ওই দিন কয়েক শ হামলাকারী উপজেলা পরিষদে হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ চালায়। এ সময় ইউএনওর কার্যালয় ছাড়াও কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়সহ নানা স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে তারা। আমার বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করার সময় আত্মরক্ষার্থে আমি অন্য জায়গায় আশ্রয় নিই।’
বগুড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) জাকির হাসান বলেন, বহু স্থানে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর হামলা করেছেন। থানায় হামলা করেছেন। সরকারি স্থাপনায় হামলা-অগ্নিসংযোগ করেছেন। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছুড়েছে পুলিশ। সহিংসতায় কেউ মারা গেছেন কি না, তা পুলিশের জানা নেই।