বন্যার্তদের সহায়তায় নিজেদের আঁকা ছবি বিক্রি করছে খুদে ও তরুণ শিল্পীরা

বানভাসি মানুষের সহায়তায় নিজেদের আঁকা ছবি বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করতে পথে নেমেছে বরিশালে খুদে ও তরুণ শিল্পীরা। শুক্রবার সকালে বরিশাল নগরের হাসপাতাল সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

বন্যায় অসহায় মানুষের কষ্ট দূর করতে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। মানুষের দুর্দশা দেখে শিশুদের মনও বিচলিত। বন্যাকবলিতদের পাশে দাঁড়াতে এবার বরিশালের শিশুরা হাত বাড়িয়েছে। তারা নিজেদের আঁকা ছবি বিক্রির চেষ্টা করছে। ছবি বিক্রির এ টাকা তারা জমা দেবে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে। খুদে শিল্পীদের সঙ্গে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে পড়ুয়া তরুণ শিল্পীরাও।

শুক্রবার সকালে চারুশিল্পীদের এ দলটিকে পাওয়া গেল বরিশাল নগরের হাসপাতাল রোডে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও দোকানে তারা ঘুরে ঘুরে ছবি বিক্রি করছে। শুধু ছবি বিক্রি নয়, এই শিশুরা পথচারী, ব্যবসায়ীসহ সব পেশার মানুষের কাছে বন্যার্ত শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর আকুতি জানাচ্ছে।

তাঁরা বলে, তাঁরা সবাই চারুকলা বরিশাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে লাখ লাখ মানুষ আজ বিপন্ন। তাঁদের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য শিশু। তাঁদের ঘর নেই, খাবার নেই, বিশুদ্ধ পানি নেই। এই অসহায় মানুষের জন্য তারাও কিছু করতে চায়। সেই চাওয়া থেকেই তারা নিজেদের আঁকা ছবি বাঁধাই করে, তা বিক্রি করে সেই অর্থ বন্যার্তদের জন্য পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

শিশুশিল্পীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চিত্রশিল্পী তাপস কর্মকার। তিনি বলেন, বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য এই প্রতিষ্ঠানের ৫০ জন শিশুশিল্পী ৫০টি ছবি এঁকেছে। এসব ছবিই তাঁরা ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছে। এরই মধ্যে তাঁদের তহবিলে ছবি বিক্রি করে ২৫ হাজার টাকা জমা পড়েছে। আঁকা ছবি বিক্রির ক্যাম্পেইন আরও কয়েক দিন চলবে। সবশেষে তাঁরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে এ টাকা পৌঁছে দেবে।

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী তাইফা তার আঁকা ছবি বিক্রি করতে এই দলের সঙ্গে ঘুরছে। তাইফা জানাল, ‘আমি পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিশুর ছবি দেখেছি। আমার মনটা খারাপ এসব মানুষের কষ্ট দেখে। এ জন্য আমি প্যাস্টেল রং দিয়ে সেই দুর্দশার ছবি এঁকেছি। এই ছবি বিক্রি করে আমি এসব মানুষের জন্য অর্থ পাঠাব।’

এই দলে যুক্ত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রথম বর্ষের ছাত্রী নন্দিনী দাস। তিনি বলেন, ‘বন্যার্তদের সহায়তায় সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছে। এটা আমাদের জন্য একটি খুবই ইতিবাচক ঘটনা। দেশের মানুষের বিপদে সম্মিলিতভাবে এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার ঘটনা সত্যি মুগ্ধ করার মতো একটি ঘটনা। মানুষের জন্য মানুষের এই আকুতি, এই জয়গান অব্যাহত থাকুক চিরকাল।’

শিল্পী ঈশিকা ঘোষ বলেন, এর আগেও সিলেটে বন্যায় তিনি ছবি বিক্রি করে সেই অর্থ ত্রাণ তহবিলে জমা দিয়েছিলেন। এবারও এই ডাকে সমবেত হয়েছেন।

চারুকলা বরিশালের সভাপতি দীপংকর চক্রবর্তী বলেন, ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলায় শিল্পীদেরও করণীয় রয়েছে—এই মনোভাব তাঁর মধ্যে কাজ করছে। সে কারণে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিল্পীরা সবাই এগিয়ে এসেছেন আজ। সবাই অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে চায়, তাদের জন্য কিছু করতে চায়। এই অনুভূতি এগিয়ে নিতেই তাঁরা বন্যার্তদের জন্য এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। তাতে বেশ সাড়া পাচ্ছেন।