পবিত্র রমজান মাসের প্রায় অর্ধেক পার হয়েছে। বাজারে রোজার পণ্যের মধ্যে ছোলা, আলু, পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। রোজার শুরু থেকেই এসব পণ্যের দাম ছিল কমতির দিকে। তবে বাজারে এখনো নির্ধারিত মূল্যের বাড়তি দামেই সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে।
আজ শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে ছোলা, ডাল, পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। সবজির বাজারে সরবরাহ যেমন বেশি, দামও তুলনামূলক কম। পাইকারিতে বেচাবিক্রি কমলেও খুচরা বাজারে ক্রেতাদের ভিড় রয়েছে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে।
চট্টগ্রাম নগরের প্রধান বাজারগুলোর মধ্যে রয়েছে খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, পাহাড়তলী ও রিয়াজউদ্দিন বাজার, বহদ্দারহাট, চকবাজার, কর্ণফুলী কমপ্লেক্স, কাজির দেউড়ি ও কর্ণফুলী মার্কেট। এসব বাজারের ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাকি রোজার দিনগুলোতেও নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বাড়বে বলে মনে হচ্ছে না। তবে তা নির্ভর করবে সরবরাহ ও চাহিদার ওপর।
চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলে বাজারে দাম বাড়ে না সচরাচর। এখন বাজারে সব পণ্যের সরবরাহ ভালো। এ বছর রোজায় শুরু থেকে দাম স্বাভাবিক ছিল, বাকি রোজাতেও স্থিতিশীল থাকবে।
এ বছর রমজানের আগে থেকেই ছোলার দাম কম ছিল। চাহিদার তুলনায় ছোলাও আমদানি হয়েছে বেশি। রোজার শুরুতে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ছোলা ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। চাহিদা বাড়ায় এক সপ্তাহ আগে গড়ে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা দরে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে। তবে এ সপ্তাহে দাম আবার ১১০ টাকার নিচে নেমে এসেছে।
ডালের বাজারে ছোলার পাশাপাশি মসুর ও মটর ডালের দামও স্থিতিশীল রয়েছে। আমদানি করা মসুর ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা দরে এবং মোটা মসুর ১০০ থেকে ১০৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মটর ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। রোজার শুরুতে একই দামে বিক্রি হয়েছে এসব পণ্য।
এদিকে খুচরা ও পাইকারি বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের তুলনায় এখন দেশি পেঁয়াজের আধিক্য। খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম বর্তমানে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। খুচরা বাজারে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫৫ টাকার আশপাশে।
গত চার মাসে বোতলজাত সয়াবিনের সংকট বাজারে। গুটিকয়েক দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেলেও দাম চাওয়া হয়েছে প্রতি লিটার ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। তবে সারা দেশে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের নির্ধারিত দাম ১৭৫ টাকা। রোজার শুরু থেকে এ নিয়ে তৎপর সরকারি সংস্থাগুলো। এ অবস্থায় কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে সরবরাহ।
চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে এক সপ্তাহ আগেও বোতলজাত সয়াবিনের দাম ২০০ টাকার আশপাশে ছিল। বর্তমানে তা ১৮৫ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ বেড়েছে তাই দাম কমেছে। খোলা সয়াবিনের দামও ১৬৫ টাকার আশপাশে নেমে এসেছে। যদিও নির্ধারিত দাম ১৫৭ টাকা প্রতি লিটার।
বাজারে সয়াবিনের সরবরাহে ঘাটতি নেই বলে মনে করছে সরকারি সংস্থাগুলো। তাঁদের মতে, এ সংকট কৃত্রিম। অবশ্য সম্প্রতি বিভিন্ন গুদাম ও দোকানে সয়াবিনের বিপুল মজুতও পেয়েছেন তাঁরা। সবশেষ নগরের খতিবের হাট এলাকায় এক দোকান থেকে ৬ হাজার ৭০০ লিটার বোতলজাত সয়াবিন উদ্ধার করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
রমজানে প্রতি বছর সবজির বাজার নিয়েও চিন্তিত থাকেন ক্রেতারা। অবশ্য এ বছর শুরু থেকে সবজির বাজার কমতির দিকে। রোজার দুই দিন আগে বাজারে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকা দরে। অন্যদিকে ক্ষীরা ৩০ থেকে ৪০, টমেটো ২০ থেকে ৩০, কাঁচা মরিচ ৪০ থেকে ৬০ ও আলু ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তবে এখন বেশির ভাগ সবজির দাম ৫০ টাকার নিচে। ফলে ক্রেতারাও স্বস্তিতে কিনতে পারছেন।
সবজিতে স্বস্তি হলেও এখনো আগের দামেই কিনতে হচ্ছে মুরগি। প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৭৫ থেকে ১৮৫ ও সোনালি ৩০০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে হাড়সহ গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ এবং শুধু মাংস ৯৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা দরে।