সৈয়দ মোবারক ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের পাশাপাশি পাঁচ কবর। আজ শনিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামে
সৈয়দ মোবারক ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের পাশাপাশি পাঁচ কবর। আজ শনিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামে

বেইলি রোডের আগুনে নিহত এক পরিবারের পাঁচজনকে পাশাপাশি কবরে দাফন

ঢাকার বেইলি রোডে বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডে মৃত ইতালিপ্রবাসী সৈয়দ মোবারক হোসেন, তাঁর স্ত্রী ও তিন সন্তানকে পারিবারিক কবরস্থানে পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের শাহবাজপুর গ্রামে জানাজা শেষে তাঁদের সমাধিস্থ করা হয়। সেখানে প্রথমেই আছে মোবারক হোসেনের একমাত্র ছেলে সৈয়দ আবদুল্লাহর কবর। এরপর সৈয়দ মোবারক, তাঁর স্ত্রী স্বপ্না আক্তার, দুই মেয়ে ফাতেমা তুজ জহুরা ও সৈয়দা আমেনা আক্তারকে কবর দেওয়া হয়েছে।

আজ শনিবার দুপুরে শাহবাজপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামজুড়ে এখনো শোকাবহ পরিবেশ। গ্রামের লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে পাঁচজনের কবর সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁরা কবরগুলোতে বেড়া দেওয়ার কাজ করছেন।

স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে প্রাণ হারানো ইতালিপ্রবাসী মোবারকের মায়ের আহাজারি থামছে না। আজ দুপুরে সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামে

সন্তান, পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনিদের মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পর থেকে মোবারকের মা হেলেনা বেগম (৭৫) নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এখনো বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তিনি আহাজারি করে বলছিলেন, ‘আমার ছেলে বলেছে, মা, এবার সবাইকে নিয়ে ইতালি চলে যাব। অনেক কাজ। তাই এবার বেশি দিন বাড়িতে থাকতে পারব না। ছেলে আসবে, তাই আমি পোলার চাল, পিঠার চাল, গাছের ফল রেখেছিলাম। এসব অহন কে খাবে? ছেলে বলছে বেশি দিন থাকবে না। এখন চিরদিনের জন্যই থেকে গেল।’

মোবারক হোসেনের স্বজন ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হেলেনা বেগমের তিন ছেলে আর এক মেয়ে। স্বামী সৈয়দ আবুল কাশেম মারা গেছেন দুই যুগ আগে। বড় ছেলে সৈয়দ সোয়েব হাসান আর মেজ ছেলে সৈয়দ মোবারক হোসেন ইতালিপ্রবাসী। একমাত্র মেয়ে সৈয়দা হাজেরা বেগম লন্ডনপ্রবাসী। সোয়েব স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ইতালিতে থাকেন। আর মোবারক ইতালিপ্রবাসী হলেও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না আক্তার (৪২), বড় মেয়ে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সৈয়দা ফাতেমা তুজ জহুরা (১৯), ছোট মেয়ে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৈয়দা আমেনা আক্তার (১৩) ও একমাত্র ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সৈয়দ আবদুল্লা (৮) থাকতেন ঢাকায় নিজেদের ফ্ল্যাটে। তাঁদের সবারই ২২ মার্চ ইতালি চলে যাওয়ার কথা ছিল।

নিহত মোবারক হোসেনের ছোট ভাই সৈয়দ আমির হামজা প্রথম আলোকে বলেন, মোবারক হোসেন পরিবারের মেজ সন্তান হলেও তিনি সবার আগে সংসারের হাল ধরেছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি ইতালি যান। প্রতিবছর বাড়িতে আসতেন। তিনি বলেন, ‘আমার ভাই যত সম্পদ করেছেন, সবই করেছেন মায়ের এবং সব ভাই-বোনের নামে। তিনি একক নামে কিছুই করেননি। ভাইয়ের ১৫ বছরের স্বপ্ন ছিল স্ত্রী-সন্তানদের ইতালি নিয়ে যাবেন। তাঁর সে স্বপ্ন পূরণ হলো না।’