নড়াইল সদর উপজেলায় গরুচোর সন্দেহে পিটুনিতে নিহত তিনজনের পরিচয় মিলেছে। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার তুলারামপুরে যশোর-নড়াইল মহাসড়কের পাশে তাঁদের গণপিটুনি দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। আজ বুধবার সকাল ৯টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে তাঁদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর চার ঘণ্টা পর বেলা ১টার দিকে তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়।
নিহত তিনজনের মধ্যে একজনের বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার তেলকাড়া গ্রামে। তাঁর নাম জান্নাতুল মোল্যা। তিনি ওই গ্রামের হাফিজুর মোল্যার ছেলে। অন্য দুজনের বাড়ি বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়। তাঁরা হলেন উপজেলার আওলাদীপুর এলাকার বেলাল উদ্দীন মোল্যার ছেলে নূরন্নবী মোল্যা এবং মাইজপাড়া গ্রামের জহিরুল ইসলামের ছেলে দুলাল ইসলাম।
বুধবার দুপুরে নড়াইল সদর থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করে বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের পিটুনিতে নিহত তিনজনের লাশ উদ্ধার করি। এ সময় তাঁদের কাছে থাকা তিনটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়। সেই মুঠোফোনের সূত্র ধরে আমরা তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি।’
সাজেদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে নিয়মানুযায়ী হস্তান্তর করা হবে। আর এ ঘটনায় গভীরতর তদন্ত চলছে, পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে তুলারামপুর এলাকায় গরু চুরি হচ্ছে। সম্প্রতি চোরের দৌরাত্ম্য আরও বেড়েছে। এ জন্য এলাকাবাসী রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। গতকাল রাত ৩টার দিকে তুলারামপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য হান্নান তরফদারের বাড়িতে গরু চুরির চেষ্টা করেন দুর্বৃত্তরা। বিষয়টি টের পেয়ে হান্নান প্রতিবেশীদের মুঠোফোনে জানান। তখন আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। স্থানীয় লোকজন চোর চক্রের সদস্যদের ধাওয়া করে তিনজনকে আটক করেন। অন্য একজন পালিয়ে যান। পরে বিক্ষুব্ধ লোকজনের পিটুনিতে ঘটনাস্থলে তিনজনের মৃত্যু হয়।
বুধবার সকালে বাবু কাজী নামের তুলারামপুর এলাকার স্থানীয় এক বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেছিলেন, বেশ কিছুদিন ধরে তুলারামপুর ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকায় মহাসড়কের পাশের বাড়িগুলো থেকে গরু চুরি হচ্ছিল। এলাকায় চোর ধরার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। চোরদের ধরার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছিল। তবে ধাওয়া করলেই তারা পালিয়ে যেত। গতকাল রাতে গরু চুরির সময় তিনজনকে ধরে স্থানীয় লোকজন পিটুনি দেন।