শরীয়তপুর শহরে সদর হাসপাতালের সামনে পার্ক নির্মাণ করেছে জেলা প্রশাসন
শরীয়তপুর শহরে সদর হাসপাতালের সামনে পার্ক নির্মাণ করেছে জেলা প্রশাসন

টিকিট ছাড়া পার্কে প্রবেশ, ইউএনওর উপস্থিতিতে শিশুদের কান ধরে শাস্তি

শরীয়তপুরে জেলা প্রশাসন পরিচালিত একটি পার্কে টিকিট ছাড়া প্রবেশ করায় পাঁচ শিশুকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। গতকাল সোমবার সন্ধ্যার পর পার্ক থেকে তাদের আটক করেন গ্রাম পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। পরে তাঁদের ওই শাস্তি দেওয়া হয়।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাইন উদ্দিনের নির্দেশ ও উপস্থিতিতে আটক শিশুদের শাস্তি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। শিশুদের কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখার ছবি ও ভিডিও করেন পার্কে আসা দর্শনার্থীরা। এসব ছবি ও ভিডিওতে ইউএনওকে দেখা গেছে।

এ ব্যাপারে ইউএনও মাইন উদ্দিন বলেন, ‘শিশুদের কান ধরিয়ে রাখার বিষয়টি আমার জানা নেই। কয়েক শিশু দেয়াল টপকে পার্কে ঢুকেছিল। পাশে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা তাদের ধরে এনেছেন। ওরা দাঁড়িয়ে ছিল, ভয়ে হয়তো কানে হাত দিয়েছে। তবে আমি তাদের (শিশুদের) বলেছি, “দেয়াল টপকে পার্কে প্রবেশ করা অপরাধ। এটা চুরির সমান অপরাধ। তোমরা আর কখনো এ কাজ  করবে না। সৎ ও ভালো মানুষ হয় জীবন যাপন করবে। এমন লেসন (শিক্ষা) দিয়ে আমি তাদের ছেড়ে দিয়েছি।” দুই শিশুকে দেড় ঘণ্টা আটকে রাখার ঘটনাটি আমার জানা নেই।’

দেয়াল টপকে পার্কে প্রবেশ করা অপরাধ। এটা চুরির সমান অপরাধ। তোমরা আর কখনো এ কাজ  করবে না। সৎ ও ভালো মানুষ হয় জীবন যাপন করবে। এমন লেসন (শিক্ষা) দিয়ে আমি তাদের ছেড়ে দিয়েছি।
মাইন উদ্দিন, ইউএনও, শরীয়তপুর সদর উপজেলা

শরীয়তপুর শহরে সদর হাসপাতালের সামনে ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির পাশে পার্ক নির্মাণ করেছে জেলা প্রশাসন। শরীয়তপুর পার্ক নামে এটি চালু হয়েছে ঈদের দিন (গত বৃহস্পতিবার)। এর চারদিকে সীমানাপ্রাচীর রয়েছে। ভেতরে শিশুদের খেলার জন্য ১৫-১৬টি বিভিন্ন রাইড বসানো হয়েছে। পার্কের প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা। পার্কের প্রবেশদ্বারে কাউন্টার রয়েছে। ঈদের দিন সকাল থেকে দর্শনার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন জেলা প্রশাসনের কর্মচারীরা। পার্ক দেখভালের দায়িত্বে আছেন ইউএনও মো. মাইন উদ্দিন। সেখানে কয়েকজন গ্রাম পুলিশ ও আনসার সদস্য পাহারায় রয়েছেন।

টিকিট ছাড়া পার্কে প্রবেশ করায় শিশুদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেলে জেলা শহরের তুলাসার, ব্যাপারী পাড়া ও স্বর্ণঘোষ এলাকার কয়েক শিশু পার্কের পাশে খেলাধুলা করছিল। তাঁরা সন্ধ্যার দিকে সীমানাপ্রাচীর টপকে পার্কে প্রবেশ করে। গ্রাম পুলিশ ও আনসার সদস্যরা পাঁচ শিশুকে আটক করেন। তাদের ধরে পার্কের উত্তর-পূর্ব দিকে আনা হয়। তখন সেখানে আসেন ইউএনও মো. মাইন উদ্দিন। চার শিশুকে কানে হাত দিয়ে দাঁড় করে রাখা হয়। তাদের বয়স ১০–১৪ বছর। কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুরা কাঁদতে থাকে। যাদের বয়স ১০ বছরের নিচে, তাদের কাছ থেকে পার্কে প্রবেশের টাকা রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর যাদের বয়স ১৩ বছরের ওপরে, এমন দুজনকে আটকে রাখা হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে পার্ক বন্ধ করার সময় গ্রাম পুলিশ সদস্যরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তখন ওই দুই শিশু তাদের চোখ এড়িয়ে পার্ক থেকে বের হয়ে যায়।

আটকে রাখা শিশুদের মধ্যে একজন শহরের একটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। সে প্রথম আলোকে জানায়, তারা পার্কের সীমানাপ্রাচীরের পাশে খেলছিল। সীমানাপ্রাচীরের ওপর উঠলে অন্য বন্ধুরা তাকে ধাক্কা মারে। তখন আনসার সদস্যরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাকে ধরে নিয়ে আসেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শহরের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিশুদের সঙ্গে এ রকম অমানবিক আচরণ করা ঠিক হয়নি। ঘটনার সময় আমি পার্কে ছিলাম। শিশুদের ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু এক কর্মকর্তার নির্দেশ থাকার কথা বলে গ্রাম পুলিশের সদস্যরা তাদের ছাড়তে রাজি হননি।’

এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠিয়েও তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি।