পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ইমাম উদ্দিন। বুধবার নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের গাজীরবাগ গ্রামে
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ইমাম উদ্দিন। বুধবার নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের গাজীরবাগ গ্রামে

‘বন্যায় নিছে বসতঘর, চোরে নিছে রিকশা’

ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাতেন নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার গাজীরবাগ গ্রামের ইমাম উদ্দিন সোহাগ (৪৭)। সম্প্রতি বন্যার পানি যখন ঘরে ঢুকে পড়েছিল। তখন ঘর ছেড়ে ওঠেন পাশের একটি খালি দোকানঘরে। ভাড়ায় চালানো অটোরিকশাটি প্রতিদিন বাড়িতে রাখতেন। এরই মধ্যে এক রাতে বাড়ি থেকে অটোরিকশাটি চুরি হয়ে যায়। বন্যার পানিতে ভেঙে পড়ে জরাজীর্ণ বসতঘরটিও। এমন পরিস্থিতির মধ্যে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি পড়েছেন চরম বিপাকে।

স্ত্রী, মা, এক ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে ইমাম উদ্দিনের পরিবার। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। মেজ মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। বাকি দুই সন্তানও স্কুলপড়ুয়া। এখন আয়রোজগার বন্ধ। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ কীভাবে চালাবেন বুঝতে পাচ্ছেন না ইমাম উদ্দিন। বন্যার সময় পাওয়া ত্রাণের চাল ছাড়া ঘরে আর কিছু নেই বলেও জানান তিনি।

ইমাম উদ্দিন বলেন, পৈতৃক সম্পদ বলতে ভিটেমাটি ছাড়া কিছু নেই। সেখানেই ছোট্ট একটি জরাজীর্ণ টিনশেড ঘরে বউ-বাচ্চাদের নিয়ে থাকতেন। বাড়িতে বন্যার পানি উঠে প্রায় কোমরসমান। ঘরের ভেতর হাঁটুসমান পানি ছিল। এমন অবস্থায় বাধ্য হয়ে ঘর ছেড়ে আশ্রয় নেন পাশের বাজারের একটি দোকানঘরের খালি কক্ষে। থাকার ঘর ও রান্নাঘরের অবস্থা ছিল নড়বড়ে। বন্যার পানিতে ঘরের মেঝে নরম হয়ে দুটি ঘরই ধসে পড়ে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় এখন পড়ে আছে শুধু শূন্য ভিটা।

বুধবার গাজীরবাগ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, একটি বাড়িতে মুঠোফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের টাওয়ার। পাশেই ইমাম উদ্দিনের কয়েকটি বিধ্বস্ত ঘর। একটি ঘরের ভেতরের খাটটিও ভেঙে গেছে। বাইরে আরেকটি ছাপরা ঘরের নিচে চুলায় রান্না করছিলেন ইমাম উদ্দিনের স্ত্রী বিবি আয়েশা। তিনি বললেন, বন্যায় থাকার ঘরের পাশাপাশি রান্নাঘরটিও ভেঙে গেছে। এখন কোনোমতে রান্না করছেন। পাশের একটি দোকানের কক্ষ দেখিয়ে আয়েশা বললেন, সেখানেই সন্তানদের নিয়ে থাকেন।

বন্যার সময় ভাড়ায় চালানো অটোরিকশাটি চুরি হয়ে যাওয়ার বিষয়ে ইমাম উদ্দিন বলেন, ‘বন্যায় নিছে বসতঘর, চোরে নিছে রিকশা।’ তিনি বলেন, বন্যার কারণে এলাকার সব সড়ক ডুবে যাওয়ায় ভাড়ায় চালানো ব্যাটারিচালিত রিকশাটি ঘরের পাশে এনে রেখেছিলেন। ২৮ আগস্ট রাতের অন্ধকারে রিকশাটি সেখান থেকে চুরি হয়ে গেছে। তাই এখন রোজগারও বন্ধ হয়ে গেছে। অটোরিকশার মালিক রিকশার ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন। তাঁকে কীভাবে ক্ষতিপূরণ দেবেন? নিজের সংসারই বা কীভাবে চালাবেন? এসব ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না।

প্রতিবেশী আবদুল খালেক বলেন, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় হতদরিদ্র রিকশাচালক ইমাম উদ্দিনের ঘরও গেছে। উপার্জনের মাধ্যম রিকশাটিও চোরে নিয়ে গেছে। এতে পরিবারটি একেবারেই নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে চরম কষ্টে দিন কাটছে। সরকারিভাবে এই অসহায় পরিবারের ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া উচিত।

বাটইয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভয়াবহ বন্যায় বসতঘর ও রিকশা হারিয়ে ইমাম উদ্দিন একেবারেই নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। ঘুরে দাঁড়ানোর মতো কোনো অবস্থা নেই। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাকেন একটি দোকানঘরে। বন্যায় ইমাম উদ্দিনের মতো তাঁর ওয়ার্ডে আরও অনেকের ঘর নষ্ট হয়ে গেছে। তাঁদের সহযোগিতায় সবার এগিয়ে আসা দরকার।