সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আজ শুক্রবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হচ্ছে। উৎসবমুখর পরিবেশে সকালে মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে তাঁর সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদ্যাপন করছেন। ঈদের নামাজ শেষে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনায় মোনাজাত করা হয়।
পিরোজপুর
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, নাজিরপুর ও কাউখালী উপজেলার কয়েক শ পরিবারের লোকজন আজ ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। মঠবাড়িয়া উপজেলার পূর্ব সাপলেজা, ভাইজোড়া, কচুবাড়িয়া, খেতাছিড়া, বাদুরতলী ও চড়কগাছিয়া গ্রামের কয়েক শ পরিবারের লোকজন ঈদের নামাজে অংশ নেন।
এ ছাড়া কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠি ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামের ৪০টি পরিবার, নাজিরপুর উপজেলার শেখমাটিয়া ইউনিয়নের ৭০টি পরিবার ঈদ উদ্যাপন করছে।
সকাল সাড়ে নয়টায় মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের ভাইজোড়া গ্রামের খোন্দকারবাড়িতে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ইমামতি করেন আমির আলী মুন্সি। সকাল সাড়ে আটটায় উপজেলার কচুবাড়িয়া গ্রামের হাজি ওয়াহেদ আলী হাওলাদার বাড়িতে ঈদের অপর একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মৌলভি হায়দার আলী। কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠি গ্রামের বেলতলা মোল্লাবাড়ি জামে মসজিদে সকাল আটটায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে মাওলানা মহিউদ্দিন ইমামতি করেন।
ভাইজোড়া গ্রামের এনামুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘২৩ মার্চ আমরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রেখেছি এবং আজ সৌদি আরবের সঙ্গেই ঈদ উদ্যাপন করছি।’
ধর্মপাশা
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার রাধানগর, ধর্মপাশা উত্তরপাড়া, সৈয়দপুর, কান্দাপাড়া, গাছতলা, জামালপুর, দশধরী, রাজনগর, বাহুটিয়াকান্দা, মেউহারী, মহদীপুর ও মগুয়ারচর গ্রামে ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হয়েছে।
ধর্মপাশা উত্তরপাড়া খানকা শরিফের কক্ষে ঈদের নামাজ পড়ান খানকার খতিব রিফাত নূরী আল মুজাদ্দেদী। দশধরী গ্রামের খানকা শরিফ প্রাঙ্গণে ঈদের নামাজ পড়ান খানকাটির খতিব মো. পলাশ মিয়া। রিফাত নূরী আল মুজাদ্দেদী বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ১১ বছর ধরে ধর্মপাশা উত্তরপাড়া গ্রামে ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ফেনী
ফেনীতে তিনটি স্থানে ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফেনী সদর উপজেলার ফরহাদনগর ইউনিয়নের পূর্ব সুলতানপুর ৭ নম্বর ওয়ার্ডে পৃথক দুটি পাড়ায় ও পরশুরাম পৌরসভার কোলাপাড়া ছয়ঘরিয়া এলাকায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
পরশুরাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, পরশুরাম পৌরসভার কোলাপাড়া ছয়ঘরিয়া এলাকায় সৌদি আরবকে অনুসরণ করে কয়েক বছর ধরে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করা হচ্ছে।
বিরামপুর
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার দুটি ইউনিয়নে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। সকাল ৮টায় উপজেলার ৫ নম্বর বিনাইল ইউনিয়ন আয়ড়া গ্রামে আয়ড়া নূরুল হুদা দাখিল মাদ্রাসা মাঠে আল আমিন ও ৬ নম্বর জোতবানী ইউনিয়নের খয়েরবাড়ি-মির্জাপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়ার ২ নম্বর জামে মসজিদে দেলোয়ার হোসেন কাজী ঈদের জামায়াতের ইমামতি করেন।
আয়ড়া নূরুল হুদা দাখিল মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত ঈদের জামাতে আশপাশের ৬টি গ্রাম থেকে ৫৪ জন পুরুষ ও ২০ জন নারী এবং খয়েরবাড়-মির্জাপুরের মসজিদে অনুষ্ঠিত ঈদের জামাতে ৫টি গ্রাম থেকে ৫০ জন পুরুষ ও ২০ জন নারী অংশ নেন।
সরিষাবাড়ী
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তিনটি স্থানে নয়টি গ্রামের পাঁচ শতাধিক মুসল্লি আজ ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন। সকাল ৮টায় বলারদিয়ার, সাতপোয়া, পাটাবুগা, আরামনগর, পুঠিয়ারপাড়, পাখাডুবি ও সিমলাবাজার এলাকার সাড়ে তিন শতাধিক মুসল্লি বলারদিয়ার মধ্যপাড়া জামে মসজিদের সামনের প্রাঙ্গণে ঈদের নামাজে অংশ নেন। এতে ইমামতি করেন আজিম উদ্দিন।
এদিকে উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের বনোগ্রাম পশ্চিমপাড়া ঈদগাহ মাঠে এবং একই ইউনিয়নের উচ্চগ্রামে ঈদের জামাতে দুই শতাধিক মুসল্লি অংশ নেন।
সাতকানিয়া
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়ার মির্জাখীল দরবার শরিফের খানকাহ মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। সকাল সাড়ে নয়টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
মির্জাখীল দরবার শরিফ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মির্জাখীল, এওচিয়া, গাটিয়াডেঙ্গা, আলীনগর, মাদার্শা, খাগরিয়া, মৈশামুড়া, পুরানগড়, বাজালিয়া, মনেয়াবাদ, চরতি, সুঁইপুরা, হালুয়াঘোনাসহ পাশের উপজেলার প্রায় দুই হাজার মুসল্লি ঈদের জামাতে অংশ নেন।
পটুয়াখালী
পটুয়াখালীর অন্তত ২২টি গ্রামে আজ ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হয়েছে। সকাল নয়টায় পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর গ্রামের বদরপুর দরবার শরিফ প্রাঙ্গণে বদরপুর দরবার শরিফ জামে মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের জামাতের ইমামতি করেন মসজিদের প্রধান খতিব মোহাম্মদ শফিকুল গণি।
বদরপুর দরবার শরিফের পরিচালক মোহাম্মদ নাজমুস সায়াদাত আখন্দ জানান, প্রতিবছরই তাঁদের ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় বদরপুর গ্রামে। এই গ্রাম ছাড়াও জেলার সদর উপজেলার ছোট বিঘাই; গলাচিপা উপজেলার সেনের হাওলা, পশুরীবুনিয়া, নিজ হাওলা ও কানকুনিপাড়া; বাউফল উপজেলার মদনপুরা, শাপলাখালী, বগা, ধাউরাভাঙ্গা, সুরদী, সাবুপুরা, আমিরাবাদ; কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া, নিশানবাড়িয়া, মরিচবুনিয়া, উত্তর লালুয়া, মাঝিবাড়ি, টিয়াখালীর ইটবাড়িয়া, পৌরশহরের নাইয়াপট্টি, বাদুরতলী, মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের সাফাখালীসহ অন্তত ২২ গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার ঈদ উদ্যাপন করেছে।
শেরপুর
শেরপুরের তিন উপজেলার চার গ্রামে ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হচ্ছে। গ্রামগুলো হলো শেরপুর সদরের বেতমারি ঘুঘুরাকান্দি ইউনিয়নের চরখারচর মধ্যপাড়া ও চরখারচর উত্তরপাড়া, নকলা পৌরসভার চরকৈয়া এবং নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী মধ্যপাড়া গ্রাম।
স্থানীয় ও জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে এসব গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নকলার চরকৈয়া গ্রামের খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত নামাজে ওই গ্রামের ৩০০ মানুষ অংশ নেন।
চাঁদপুর
চাঁদপুর জেলার অর্ধশত গ্রামে আজ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব গ্রামে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সকাল ১০টার মধ্যে বিভিন্ন মসজিদ ও মাঠে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, কচুয়া, শাহরাস্তি ও মতলবের বিভিন্ন এলাকায় ঈদের নামাজ পড়েছেন মুসল্লিরা। ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাচনমেঘ টোরা মুন্সির গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, তাঁদের গ্রামের প্রায় দশ হাজার মুসল্লি আজ ঈদ উদযাপন করেছেন।
শরীয়তপুর
শরীয়তপুরের ছয়টি উপজেলার ৩০টি গ্রামের অনেক বাসিন্দা ঈদ উদযাপন করেছেন। নড়িয়া উপজেলায় সুরেশ্বর দরবার শরিফ প্রাঙ্গণে সকাল ৯টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঈদের জামাতে অংশ নিয়ে মুসল্লিরা দেশ ও জাতির কল্যাণে মোনাজাত করেন। সুরেশ্বর দরবার শরিফের মুসল্লিরা জানান, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে তাঁরা ঈদ উদযাপন করছেন।
নোয়াখালী
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বসন্তবাগ গ্রামের মুন্সি বাড়ি জামে মসজিদে, জিরতলী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ফাজলিপুর গ্রামের পাটোয়ারী বাড়ি মসজিদে, নোয়াখালী পৌরসভা হরিনারায়ণপুর দায়রা শরিফ জামে মসজিদে ও পশ্চিম সাহাপুর মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
স্থানীয় মুসল্লিরা জানিয়েছেন, বসন্তবাগ গ্রামের ঈদের জামাতে ২০০-২৫০ জন মুসল্লি, হরিনারায়ণপুর বেন্ডার মসজিদের পূর্ব পাশে দায়রা ঘরে ২২ জন মুসল্লি, পশ্চিম সাহাপুর জামে মসজিদে ১৫-২০ জন, জিরতলী ফাজিলপুর গ্রামের মসজিদে ৩০০-৪০০ জন মুসল্লি ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন।
এ ছাড়া চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপজেলার বেশ কিছু গ্রামে, মৌলভীবাজারে অর্ধশত গ্রামে, ঝালকাঠির রাজাপুরের একটি গ্রামে, সাতক্ষীরার ২৫টি গ্রামে, ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার ১৩টি গ্রামের শত শত মুসল্লি সৌদি আরবের সঙ্গে মিল ঈদ উদযাপন করেছেন।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, ফরিদপুর এবং প্রতিনিধি, পিরোজপুর, ফেনী, পটুয়াখালী, শেরপুর, ধর্মপাশা, সুনামগঞ্জ, বিরামপুর, দিনাজপুর, সরিষাবাড়ী, জামালপুর ও সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, আনোয়ারা, শরীয়তপুর, ঝালকাঠি