আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করে প্রজ্ঞাপিত বনভূমিতে জাহাজভাঙা ইয়ার্ডের ইজারা চুক্তি পুনর্বহাল করায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। তাঁকে আদালতে আগামী ৯ জুলাই সশরীর উপস্থিত হওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের বাতিল করা ইজারা চুক্তি বিভাগীয় কমিশনারের পুনর্বহাল আদেশের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আজ রোববার হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মামলা করেন। মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জালিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল ও আদেশ জারি করেন।
বেলার আইনজীবী এস হাসানুল বান্না প্রথম আলোকে বলেন, পুনর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হয়েছে। আদালত পুনর্বহাল আদেশ দেওয়া অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ইয়াছমিন পারভীনকে আদালতে তলব করেছেন।
আদালত সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম জেলার ১ লাখ ৯৫ হাজার একর বনভূমিকে বন আইন, ১৯২৭–এর ৪ ধারার অধীন সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণার জন্য সরকার ১৯৭৭ সালের ২৪ মার্চ গেজেট প্রকাশ করে। এর মধ্যে সীতাকুণ্ড উপজেলার ৬২৭ একর বনাঞ্চলও রয়েছে। এগুলো বন আইনের ৪ ধারায় প্রজ্ঞাপিত। এসব ভূমি জাহাজভাঙা শিল্পের জন্য ইজারা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে এবং উপকূলীয় বনভূমি রক্ষায় আদালতের একাধিক নির্দেশনা রয়েছে।
আদালত ও বেলা সূত্র আরও জানায়, নির্দেশনা অমান্য করে চট্টগ্রামের তখনকার জেলা প্রশাসক ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর সীতাকুণ্ড উপজেলার উত্তর সলিমপুর মৌজার ৭ দশমিক ১০ একর বনভূমি বিবিসি স্টিল লিমিটেডকে (স্বত্বাধিকারী আবুল কাসেম) ইয়ার্ড নির্মাণের জন্য ইজারা দেন। এ নিয়ে বেলা জনস্বার্থে একটি মামলা করে। হাইকোর্ট ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি ইজারা অবৈধ ঘোষণা করে বেশ কিছু নির্দেশনা দেন। কিন্তু ওই আদেশ অমান্য করে ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি একই দাগের ৫ একর ভূমি আবুল কাসেমের স্ত্রী কোহিনূর বেগমের (কোহিনূর স্টিল) নামে পুনরায় ইজারা দেন।
ইজারার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা মামলা করে বেলা। এরপর ২০২৩ সালের ২৯ মে জেলা প্রশাসন ইজারা চুক্তি বাতিল করলে মামলাটি ‘নট প্রেসড’ হয়। পরে জেলা প্রশাসনের আদেশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে আপিল করে কোহিনূর স্টিল। ২০২৪ সালের ২৪ মার্চ বন বিভাগের অনুপস্থিতিতে বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) জমির একসনা ইজারা পুনর্বহাল করার আদেশ দেন।
এ নিয়ে ১ মে প্রথম আলোতে ‘বন কেটে ইয়ার্ড, বাতিল ইজারা ফিরে পেল কোহিনূর স্টিল’ শিরোনামে প্রতিবেদন ছাপা হয়।
এরপর বেলা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে আইনি নোটিশ প্রদান করে। পরে আজ আদালত অবমাননার মামলা করা হয়। বেলার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী মোহাম্মদ আশরাফ আলী। তাঁকে সহযোগিতা করেন এস হাসানুল বান্না। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।