সীতাকুণ্ড-মিরসরাই

অগ্নিনিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত অক্সিজেন প্ল্যান্টে হতাহতদের উদ্ধারে নামেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও স্থানীয় ব্যক্তিরা। শনিবার সন্ধ্যা ছয়টায়
ফাইল ছবি

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় অন্তত ৩৫০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ শিল্পপ্রতিষ্ঠান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্বপাশে অবস্থিত। আর পশ্চিমপাশে সাগর উপকূলে আছে জাহাজভাঙা শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া সাগর উপকূলে রয়েছে আমাদানি করা গ্যাসের প্রতিষ্ঠান, যারা সিলিন্ডারভর্তি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে। মিরসরাই উপজেলায়ও অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান কোনটির অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা অতি ঝুঁকিপূর্ণ এবং কিছুটা কম ঝুঁকিপূর্ণ এ রকম ভাগে ভাগ করে তালিকা তৈরির জন্য ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল হামিদ মিয়ার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের ওই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের তিনজন পরিদর্শক ও সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা নুরুল আলম।

আগামী এক মাসের মধ্যে সীতাকুণ্ড এবং মিরসরাইয়ের সব কটি কারখানা পরিদর্শন করে কারখানাগুলোর অবস্থা অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও কম ঝুঁকিপূর্ণ দুটি ভাগে ভাগ করে তালিকা তৈরি করে জমা দিতে বলা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক।

গতকাল কমিটি গঠনের আগেই উপসহকারী পরিচালক আবদুল হামিদ মিয়ার নেতৃত্বে পরিদর্শক কুতুব উদ্দিন গতকাল দিনব্যাপী সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন কনটেইনার ডিপো পরিদর্শন করেন।

গত বছরের ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপো বিস্ফোরণের ঘটনায় ৫০ জন নিহত ও দুই শতাধিক লোক আহত হয়েছিলেন। ওই ঘটনার পর কারখানাগুলোর অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা দুর্বলতার চিত্র ফুটে ওঠে। সমালোচনা শুরু হলে অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারে নড়েচড়ে বসে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। শুরুতেই চট্টগ্রামের ২৩টি কনটেইনার ডিপোতে ফায়ার সেফটি প্ল্যান বাস্তবায়নের জোর তাগিদ দেয়। ওই সব কনটেইনার ডিপো এখন অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা বাস্তবায়নের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের অক্সিজেন কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে ভেতরে থাকা ট্রাকে আগুন ধরে যায়

এরই মধ্যে গত শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সীমা অক্সিজেন লিমিটেড নামে অক্সিজেন তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণে সাতজন নিহত ও অন্তত ২৪ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইয়ের সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা কোন পর্যায়ে রয়েছে, কোন কোন প্রতিষ্ঠানের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, সেটি খুঁজে বের করতে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ কমিটি গঠন করে।

ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোন একটি কারখানায় অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থার কী হবে, সেটি কারখানার ধরনের ওপর নির্ভর করে। রাসায়নিক আছে এমন কারখানায় অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা একরকম, আবার রোলিং মিলে আরেক রকম, আবার পোশাক কারখানায় ভিন্ন রকম অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে।

ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল তিনি চট্টগ্রামের উপসহকারী পরিচালক আবদুল হামিদ মিয়াকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন। ওই কমিটি আজ মঙ্গলবার থেকে কাজ শুরু করবে। প্রথম দিনে তারা সীতাকুণ্ড মীরসরাইয়ে যতগুলো অক্সিজেন কারখানা আছে, সেগুলোর তালিকা তৈরি করবে। কারখানাগুলো অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা কোন পর্যায়ে রয়েছে, প্ল্যান্টগুলোর কী কী ঝুঁকি আছে, তা খতিয়ে দেখবে। এ ছাড়া কারখানাগুলোর লাইসেন্স আছে কি না, তা দেখবে। চলতি সপ্তাহে তারা অক্সিজেন প্ল্যান্টগুলোর ছবিসহ তথ্য তাঁর কাছে জমা দেবে। এ ছাড়া মাসব্যাপী সব কটি কারখানার ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স থাকলেও যেসব কারখানায় অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা সন্তোষজনক নয়, তাদের তালিকা তৈরি করে আগামী ২ এপ্রিলের মধ্যে তাঁর দপ্তরে জমা দেবে তদন্ত কমিটি।

আবদুল মালেক আরও বলেন, তালিকা হাতে পাওয়ার পর এসব ঝুঁকিপূর্ণ কারখানাগুলোকে তাঁরা সর্বোচ্চ তিনবার চিঠি দিয়ে অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা তাঁদের পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করতে জোরালো তাগিদ দেবেন। যদি তাতে সন্তোষজনক অগ্রগতি না হয়, তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।