ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মির্জা আজমের বার্ষিক আয় প্রায় ৮২ গুণ বেড়েছে। ১৫ বছরের ব্যবধানে তাঁর বার্ষিক আয় সাড়ে চার লাখ টাকা থেকে পৌনে চার কোটি টাকার কাছাকাছি ঠেকেছে। একই সময়ে তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেড়ে হয়েছে ১২২ গুণ। গত পাঁচ বছরে তাঁর সম্পদ বেড়েছে পৌনে ২৬ কোটি টাকা।
মির্জা আজম আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ১৯৯১ সাল থেকে টানা ছয়বারের সংসদ সদস্য। বিএ পাস মির্জা আজম দশম জাতীয় সংসদে সরকারের বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। নবম থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা মির্জা আজমের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মির্জা আজমের বার্ষিক আয় ছিল ৪ লাখ ৪৮ হাজার ১৮৫ টাকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এখন তাঁর বার্ষিক আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৬৬ লাখ ২ হাজার ৫৭ টাকায়। অর্থাৎ গত ১৫ বছরে তাঁর বেড়েছে প্রায় ৮২ গুণ। যদিও এবার তিনি জমি বিক্রি বাবদ ১ কোটি ৫৭ লাখ ৩১ হাজার টাকা আয় দেখিয়েছেন। এ ছাড়া বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া বাবদ তিনি ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭৪ হাজার ৩৭ টাকা আয় দেখিয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ১ কোটি ২৮ লাখ ৯৯ হাজার ৩৪২ টাকা। ২০১৪ সালে তাঁর আয় ছিল ১৫ লাখ ৭২ হাজার ৭৮৬ টাকা। অর্থাৎ ১০ বছরে তাঁর আয় বেড়েছে ২৩ দশমিক ২৭ গুণ।
২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় মির্জা আজমের কাছে নগদ ২৩ লাখ ৩২ হাজার ৬৮৫ টাকা ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাঁর কোনো জমানো টাকা কিংবা কোনো বিনিয়োগ ছিল না। এরপর তিনবার সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালনের পর তাঁর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ও কোম্পানির শেয়ার ও স্টক এক্সচেঞ্জে বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ কোটি ৫৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ টাকা। সব মিলিয়ে ২০২৩ সালে তাঁর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫ কোটি ৬৪ লাখ ৩০ হাজার ১০০ টাকা। এর মধ্যে ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা দামের তিনটি জিপ ও ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকার ব্যবসায়িক মূলধনও আছে।
২০১৮ সালে তাঁর অস্থাবর সম্পদ ছিল ২৭ কোটি ১৬ লাখ ৫৭ হাজার ৬৯ টাকা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ছিল ৪৮ লাখ ৩৭ হাজার ৬৮৫ টাকা। গতবার নির্বাচনের সময় তাঁর হাতে নগদ ৬ কোটি ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩১ টাকা থাকলেও এবার তাঁর নগদ টাকার পরিমাণ কমেছে। ২০২৩ সালে জমা দেওয়া হলফনামায় তাঁর হাতে নগদ ১৯ লাখ টাকা থাকার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।
পেশায় ব্যবসায়ী মির্জা আজম এবারের হলফনামায় ৩১ কোটি ১০ লাখ ৮ হাজার ১৯২ টাকার স্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন। এর মধ্যে ৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা মূল্যের ১৭ দশমিক ৬৩ একর কৃষিজমি, ১২ কোটি ৮২ লাখ টাকা দামের প্রায় দেড় একর অকৃষিজমি, ১১ কোটি সাড়ে ২৮ লাখ টাকা মূল্যের ২টি দালান ও ৩৬ লাখ সাড়ে ১৯ হাজার টাকার ১টি ফ্ল্যাট আছে।
পাঁচ বছর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় স্থাবর সম্পদের মূল্য ছিল ১৩ কোটি ৮২ লাখ ২৮ হাজার ৬২ টাকা। এর মধ্যে কৃষিজমি ২ দশমিক ৪৫ একর থেকে ১৭ দশমিক ৬৩ একর হয়েছে। তবে এবার তাঁর অকৃষিজমির পরিমাণ কমেছে। ১৫ বছর আগে তাঁর স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ২৯ হাজার ৬৫২ টাকা। তখন তিনি বাড়ি বা কোনো অ্যাপার্টমেন্টের কথা উল্লেখ করেননি। যদিও ২০১৩ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় স্থাবর সম্পদের মধ্যে তিনি ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট ও জামালপুরে নয়টি দালানের কথা উল্লেখ করেছিলেন তিনি।
সরকারের টানা তিন মেয়াদে মির্জা আজমের স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ৭৯ গুণের বেশি। ২০০৮ সালে মির্জা আজমের স্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩৭ লাখ ২৬ হাজার ৬৮ টাকা। এর মধ্যে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া নেত্রকোনা শহরে ১০ লাখ টাকা মূল্যের ৬ শতাংশ জমি, ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা মূল্যের ২ দশমিক ১৯ একর কৃষিজমি ছিল। তবে তখন তাঁর নামে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পোস্টাল সঞ্চয় ও ব্যবসায়িক মূলধনের তথ্য ছিল না।
বর্তমানে মির্জা আজমের স্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯ কোটি ৫১ লাখ ১ হাজার ৪০১ টাকা। এর মধ্যে ২ কোটি ৩৬ লাখ মূল্যের ফ্ল্যাট, ৩ কোটি ৪১ টাকা মূল্যের ২টি দালান ও ১ কোটি ১৬ লাখ ৪৭ হাজার ১৬৮ টাকার ব্যবসায়িক মূলধন আছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মির্জা আজমের স্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল ১১ কোটি ১৮ লাখ ৫ হাজার ২৭০ টাকা। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে তাঁর আড়াই গুণের বেশি সম্পদ বেড়েছে।
২০০৮ সালে বিয়ের উপহার হিসেবে মির্জা আজমের স্ত্রীর ২০ ভরি সোনা ছিল। ২০১৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬২ ভরিতে। ২০১৮ সালে সোনার পরিমাণ ২০০ ভরিতে ঠেকলেও এবার তা কমে ১২১ ভরিতে দাঁড়িয়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মির্জা আজমের একটি জিপ ও একটি পিকআপ থাকলেও এখন তাঁর তিনটি জিপ গাড়ি আছে। তবে মির্জা আজমের স্ত্রীর কোনো গাড়ি নেই।