সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশ উপলক্ষে নেতা-কর্মীদের ব্যানার-ফেস্টুনে ঢেকে গেছে নগরের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল
সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশ উপলক্ষে নেতা-কর্মীদের ব্যানার-ফেস্টুনে ঢেকে গেছে নগরের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল

সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশ

নেতাদের ‘নজর কাড়তে’ টানানো বিলবোর্ড-ফেস্টুনে ঢাকা পড়েছে হাসপাতাল

সিলেট নগরের চৌহাট্টা এলাকার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল। করোনা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত একটি হাসপাতাল। আগামী শনিবার সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে হাসপাতালটির নামফলক থেকে শুরু করে সামনের পুরো অংশ বিলবোর্ড-ফেস্টুনে ঢেকে ফেলা হয়েছে। হাসপাতালটির বিপরীত পাশে সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

বিলবোর্ড-ফেস্টুনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতা কারও ছবি বাকি নেই। সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতাদের ‘নজর কাড়তে’ বিলবোর্ডগুলো বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর সিলেটে এসেছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তখন বিশাল গাড়িবহর নিয়ে রোডমার্চ করে ঢাকা থেকে সিলেটে আসেন তিনি। সেই সমাবেশের পর এবার গণসমাবেশের আয়োজন করেছে দলটি। এতে জনসমাগম বাড়াতে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। যদিও এবার দলীয় চেয়ারপারসন আসছেন না। গণসমাবেশে জনসমাগম বাড়াতে প্রচার-প্রচারণায় কোনো কমতি রাখছেন না নেতা-কর্মীরা। দলটির নেতারা আশা করছেন, গণসমাবেশে চার লাখের বেশি জনসমাগম হবে।

আজ মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে চৌহাট্টা, হাসপাতাল ও সমাবেশস্থলের আশপাশ এলাকায় দেখা গেছে, চৌহাট্টা মোড় থেকে রিকাবীবাজার কবি নজরুল চত্বর পর্যন্ত বিলবোর্ড-ফেস্টুনে সয়লাব। চৌহাট্টা থেকে কবি নজরুল চত্বর পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং সড়ক বিভাজকে লাগানো সৌন্দর্যবর্ধনের গাছে পেরেক মেরে ঝোলানো হয়েছে বিভিন্ন নেতা-কর্মীর ফেস্টুন। অন্যদিকে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের সম্মুখভাগের পুরো অংশ ঢাকা পড়েছে সমাবেশের বিলবোর্ডে। হাসপাতালের দেয়ালের সঙ্গে বাঁশ বেঁধে বিলবোর্ড ও ফেস্টুনে স্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে প্রবাসী নেতা-কর্মীদের ছবি আছে।

সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালের দ্বিতীয় ফটকের সামনে ভ্যান থেকে বাঁশ নামাতে দেখা গেছে। ভ্যানের সঙ্গে আসা যুবক নিজেকে বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কর্মরত জানিয়ে বলেন, আরও কয়েকটি বিলবোর্ড টানাতে এসব আনা হয়েছে।

হাসপাতালের সামনে পথচারী সালমান আহমদ বলেন, বিলবোর্ড-ফেস্টুনে এমনভাবে ঘিরে রাখা হয়েছে যে দেখে বোঝার উপায় নেই ভেতরে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল আছে। এতে সেবাপ্রার্থীদের বিভ্রান্তিতে পড়ার আশঙ্কা আছে। বিলবোর্ড-ফেস্টুন লাগাতে যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে।

বিএনপির গণসমাবেশ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় নেতাদের ‘নজর কাড়তে’ নেতা-কর্মীদের ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে নগর। মঙ্গলবার নগরের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের সামনে

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতা বলেন, গণসমাবেশ সফল করতে বেশ কয়েক দিন ধরে প্রচারণা চলছে। সমাবেশস্থল ও আশপাশ এলাকায় বসানো বিলবোর্ড-ফেস্টুনগুলো মূলত কেন্দ্রীয় নেতাদের নজর কাড়ার জন্যই টানানো। এ ছাড়া স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে বিলবোর্ডে নাম ও ছবি দিয়ে পরিচিত হওয়ার বিষয় আছে। তাঁরা বলেন, এখন রাজপথে না থেকেও প্রচারের মাধ্যমে পরিচিতি বাড়ানো যায়। যদিও বিলবোর্ড-ফেস্টুনে থাকা অনেকে পরিচিত মুখ। যাঁরা তাঁদের বন্দনা করে নিজেদের নাম ও ছবি ছাপিয়েছেন, তাঁরা গণসমাবেশের আড়ালে নিজেদের প্রচারণা চালাচ্ছেন।

হাসপাতালে কর্মরত এক চিকিৎসক বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। একটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল এভাবে ঢেকে ফেলা ঠিক নয়। বিষয়টি রাজনৈতিক বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু বলছে না। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানকে এভাবে আড়াল করা উচিত নয়। শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের অধিক্ষক ও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, বিলবোর্ড-ফেস্টুন স্থাপনের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না তাঁর জানা নেই।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হানিফুর রহমান বলেন, বিলবোর্ড-ফেস্টুন লাগানোর অনুমতি নেওয়ার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে তিনি জানান।

হাসপাতাল ঢেকে প্রচারণার বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা বিলবোর্ড-ফেস্টুন লাগিয়েছেন, তাঁরা অনুমতি নিয়েছেন কি না জানি না।’ তবে বিলবোর্ড-ফেস্টুন লাগানোর বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার নির্দেশনা আছে বলে তিনি জানান।