ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় বাবা ও দুই সন্তানের জানাজায় মানুষের ঢল। আজ রোববার সকালে
ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় বাবা ও দুই সন্তানের জানাজায় মানুষের ঢল। আজ রোববার সকালে

এক পরিবারের তিনজনের একসঙ্গে জানাজা দুধনই গ্রামে আগে কেউ পড়েনি

ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় ভিমরুলের কামড়ে নিহত বাবা ও দুই সন্তানের মরদেহ আজ রোববার সকালে পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে। নিজ বাড়ির সামনেই বাবা ও দুই সন্তানের কবর দেওয়া হয়। জানাজা পড়া হয়েছে একসঙ্গে। দুধনই গ্রামে এক পরিবারের একসঙ্গে তিনজনের মৃত্যু আগে কখনো দেখেনি এলাকাবাসী।

স্ত্রী, তিন ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে ছিল আবুল কাসেমের সংসার। ৯ হাজার টাকা বেতনে মসজিদে ইমামতি করে চালাতেন সংসার। ভিটে ছাড়া আর কোনো জমি না থাকায় বর্গা চাষ করতেন। সন্তানদের মাদ্রাসায় পড়াচ্ছিলেন।

স্বজনেরা জানান, আবুল কাসেমের বড় ছেলে মো. হেদায়েত উল্লাহ (২১) মাদ্রাসাছাত্র। মেয়ে হাবিবা আক্তার (১৯) বিবাহিত। আরেক ছেলে এহসানুল হক (১৭) মাদ্রাসায় পড়ে। লাবিবা আক্তার স্থানীয় মহিলা মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণিতে পড়ত ও পাঁচ বছরের সিফাত উল্লাহ এখনো পড়ালেখা শুরু করেনি।

বাড়ির চারপাশে বন্যার পানি থাকায় গতকাল শনিবার সকালে বাবার সঙ্গে নৌকা নিয়ে বের হয়েছিল লাবিবা ও সিফাত। কিন্তু একটি বাঁশঝাড়ে নৌকার ধাক্কা লেগে ভিমরুলের চাক ভেঙে কামড়াতে শুরু করে আবুল কাসেম ও তাঁর দুই সন্তানকে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবা ও দুই সন্তানের মৃত্যু হয়। গতকাল রাতে তিনজনের মরদেহ নেওয়া হয় বাড়িতে।

আজ সকাল সাড়ে ৯টায় দুধনই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠসংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে বাবা ও দুই সন্তানের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে হাজারো মানুষ অংশ নেন। নিহত কাসেমের বড় ছেলে মো. হেদায়েত উল্লাহ বাবা, ভাই ও বোনের জানাজা পড়িয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবা, ভাই ও বোনের জানাজা পড়ানো খুব কষ্টের ছিল। আল্লাহ যেন তাদের বেহেশত নসিব করেন।’

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি স্বামী ও দুই সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় শামছুন্নাহার। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভিটেটুকুই সম্বল। আমার স্বামী মসজিদে চাকরি করে ৯ হাজার টাকা বেতন পেত, তা দিয়ে সংসার চলত। কিছু জমি বর্গা চাষ করে সেই ধান দিয়ে বছরের ভাত হতো। কিন্তু এখন সংসারে উপার্জন করার আর কেউ রইল না।’

কাসেমের ভাতিজা মো. মোকসেদুল ইসলাম বলেন, ‘এই গ্রামে একসঙ্গে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু আগে হয়নি। একই সঙ্গে তিনজনের জানাজা ও দাফন বিরল ঘটনা। এমন মর্মান্তিক মৃত্যু যেন কারও পরিবারে না আসে।’

পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা আর দেখিনি। আবুল কাসেম অভাবের মধ্যেও সন্তানদের নিয়ে সৎভাবে জীবন যাপন করতেন। দুই সন্তানসহ তাঁর এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে সবাই শোকাহত।’