শ্রীমঙ্গলে চারটি চা–বাগান কর্তৃপক্ষের থানায় জিডি

সিলেট বিমানবন্দর সড়কের লাক্কাতুরা চা-বাগানে শ্রমিকদের বিক্ষোভ। বুধবার সকালে
ছবি: আনিস মাহমুদ

ন্যূনতম দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে চলমান শ্রমিক ধর্মঘটের উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে শ্রীমঙ্গলের চারটি চা–বাগানের পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। জিডিতে শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে কাঁচা চা–পাতা নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে চা–বাগানগুলোর পক্ষ থেকে আলাদাভাবে জিডি করা হয় বলে আজ বুধবার প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন শ্রীমঙ্গল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবির।

জিডি থেকে জানা যায়, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চলমান শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে কাঁচা চা–পাতা নষ্ট হচ্ছে। ধর্মঘটের কারণে রাজঘাট চা–বাগানের ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৩৫ কেজি, ডিনস্টন চা কারখানায় ৯৯ হাজার ২৫০ কেজি, বালিশিরা চা কারখানায় ৫০ হাজার ২০৭ কেজি, আমরাইল চা কারখানায় ৫ হাজার ৬৮৩ কেজি কাঁচা চা–পাতা নষ্ট হয়ে গেছে। শ্রমিকেরা ধর্মঘট ডেকে কাজ বন্ধ রাখায় উত্তোলিত চা–পাতা প্রক্রিয়াজাত করা যাচ্ছে না। তাই এই কাঁচা পাতাগুলো কারখানায় থেকে নষ্ট হচ্ছে এবং এতে তাঁদের কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।

জিডির বিষয়ে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি বলেন, ‘আজ (বুধবার) ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের জন্য আমরা ঢাকায় এসেছি। এখন শুনলাম বাগান কর্তৃপক্ষ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। আমরা বলব, এই চা–পাতা নষ্ট হওয়ার পেছনে মালিক পক্ষই দায়ী। আমরা আন্দোলনে যাওয়ার আগে মালিকপক্ষকে মজুরি বাড়ানোর জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। পরবর্তী সময়ে আমরা টানা চার দিন মাত্র দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি দিই। তখন চা–শ্রমিকেরা কর্মবিরতি করেও বাগানের সব কাজ করেছেন। দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি করেও আমরা চা–বাগানের ক্ষতি করিনি। আমাদের দাবি তখনই মেনে নেওয়া বা আমাদের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকে মালিকপক্ষ বসলে আজকের ধর্মঘটের প্রয়োজন পড়ত না। মালিকপক্ষ ইচ্ছে করেই কালক্ষেপণ করেই চায়ের ক্ষতি করছে। গত ১৯ মাস ধরে মজুরি সমস্যার সমাধান না করে যে ক্ষতি হয়েছে, সেটার জন্য মূলত বাগান কর্তৃপক্ষ দায়ী।’

শ্রীমঙ্গল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, শ্রীমঙ্গলের রাজঘাট চা–বাগান, ডিনস্টন চা–বাগান, আমরাইল ছড়া চা–বাগান ও বালিশিরা চা–বাগান—এই চারটি বাগানের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজাররা বাদী হয়ে গতকাল রাতে আলাদাভাবে সাধারণ ডায়েরি করেছেন। বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হবে।

ন্যূনতম ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে শ্রমিকদের চলমান ধর্মঘট নিরসনে গতকাল মঙ্গলবার দিনব্যাপী মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বিভাগীয় শ্রম দপ্তর কার্যালয়ে চা শ্রমিকনেতাদের নিয়ে আলোচনায় বসেন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী। সেখানে কোনো সমঝোতায় না পৌঁছাতে পেরে আজ বিকেলে ঢাকার শ্রম অধিদপ্তরের কার্যালয়ে মালিকপক্ষ, শ্রমিকপক্ষকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় সভার আয়োজন করে শ্রম অধিদপ্তর। সেখানে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আলোচনা শুরু হয়েছে।

এর আগে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে ৯ আগস্ট থেকে চার দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি এবং গত শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট করছেন চা–শ্রমিকেরা। আজ বুধবার বৈঠক চলাকালেও ধর্মঘট করে দেশের প্রতিটি চা–বাগানে বিক্ষোভ–সমাবেশ ও মিছিল চালিয়ে যান শ্রমিকেরা।