বর্ষা না আসতেই রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার ৬ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে ৪০০ মিটারের বেশি এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে। এতে ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে দুটি ফেরিঘাট। আতঙ্কে দিন পার করছে এলাকার দেড় শতাধিক পরিবার।
এ অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জরুরিভাবে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে আর তাতেই ৬ ও ৭ নম্বর ঘাট এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের মাত্রা বাড়লে এই দুটি ফেরিঘাটও ভাঙনঝুঁকিতে পড়বে। তাঁরা বিআইডব্লিউটিএকে অনুরোধ করেছেন দ্রুত ব্যবস্থা নিতে।
গতকাল সকালে দৌলতদিয়ার ৬ নম্বর ফেরিঘাট এলাকায় দেখা যায়, একটি বড় ইঞ্জিনচালিত ট্রলার বোঝাই করে আনা বালু জিও ব্যাগে ভর্তি করা হচ্ছে। পাশাপাশি ওই সব বস্তা শ্রমিকেরা ভাঙনকবলিত এলাকায় ফেলছেন। এ সময় সেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে জড়ো হয়েছেন। তাঁরা বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়া হলে বর্ষা মৌসুমে ফেরিঘাটসহ স্থানীয় ছাত্তার মেম্বার পাড়ার দেড় শতাধিক পরিবারের ঘর বিলীন হতে পারে।
পদ্মাপাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে একটি বড় মুদিদোকান, মাছের আড়ত ও একটি নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যালয়। নদীর পাড় থেকে মাত্র তিন-চার হাত দূরেই রয়েছে বারেক মৃধার মুদিদোকান ও পেছনে বসতবাড়ি। বারেক মৃধার চোখেমুখে একধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। কখন না জানি ভাঙন আরও বেড়ে যায়। ভাঙন বাড়লে দোকানসহ বসতভিটা বিলীন হয়ে যাবে।
বারেক মৃধা বলেন, ‘কুশাহাটা ও বেথুরী থেকে দুই দফা ভাঙনের পর ২০ বছর ধরে ফেরিঘাট এলাকায় এসেছি। ছাত্তার মেম্বার পাড়ার ওহাব মোল্যার কাছ থেকে ৬ শতাংশ জমি বাৎসরিক ৩ হাজার টাকা লিজ (ইজারা) নিয়ে বসতি ও নদীর পাড়ে মুদিদোকান গড়েছি। ঘরে স্ত্রী, চার কন্যাসন্তান। পদ্মা সেতু চালুর আগে দোকানের আয় দিয়ে সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু সেতু চালুর পর ঘাট মরে গেছে। বেচাকেনা নেই, কোনোভাবে দিন পার করছি। দুই মেয়ে কলেজে পড়াশোনা করে। তাদের খরচ ঠিকমতো দিতে পারি না। এরপর এখন ভাঙনে সব বিলীন হলে আমাদের যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই।’
স্থানীয় বাসিন্দা সরোয়ার মোল্যা বলেন, প্রায় ১০ দিন ধরে ঘাট এলাকা ভাঙছে। অথচ তাঁদের কান্না আর আকুতি কারও কাছে পৌঁছায় না। যদি ভাঙন বন্ধ না হয়, তাহলে এ গ্রাম রক্ষা করা যাবে না। ছাত্তার মেম্বার পাড়ার ৬ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাট এলাকায় দেড় শতাধিক পরিবারের সবাই ভাঙনের আতঙ্কে দিন পার করছেন।
বিআইডব্লিউটিএর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সকাল থেকে জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করেছেন। স্থানীয়ভাবে একজনকে সাব-ঠিকাদারি দিয়ে এসব বস্তা ফেলা হচ্ছে। পরে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে তা সমন্বয় করা হবে। তাঁদের প্রাথমিক ধারণা, ৬ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাট এলাকার বিলীন ৪০০ মিটারসহ সংস্কারকাজ করতে ৪০ লাখ টাকার মতো ব্যয় হতে পারে।