গ্রাম পুলিশ সদস্য রঞ্জিত কুমার দে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার মুক্তার শেখ। আজ শুক্রবার সকালে রাজবাড়ী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে
গ্রাম পুলিশ সদস্য রঞ্জিত কুমার দে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার মুক্তার শেখ। আজ শুক্রবার সকালে রাজবাড়ী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে

পোড়া মবিল ও অটোরিকশার চাকার দাগের সূত্র ধরে খুলল হত্যারহস্য

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে একটি ভোটকেন্দ্রে পাহারার দায়িত্বে থাকা গ্রাম পুলিশ সদস্য রঞ্জিত কুমার দে হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটনের কথা জানিয়েছে পুলিশ। ছাগলচোরদের ধরিয়ে দিতে চাওয়ায় ভোটের আগের রাতে তিনি খুন হন বলে দাবি পুলিশের। এ ঘটনায় পুলিশ একজন গ্রেপ্তার করেছে।

আজ শুক্রবার সকালে নিজ কার্যালয় ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানিয়েছেন রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ। হত্যাকাণ্ডের স্থানে পড়ে থাকা পোড়া মবেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চাকার দাগের সূত্র ধরে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করা হয়েছে বলে ব্রিফিংয়ে জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের দিন রাতে বালিয়াকান্দির চর আড়কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাহারার দায়িত্বে ছিলেন রঞ্জিত কুমার দে। পরদিন ভোর ৫টার দিকে বিদ্যালয়ের টয়লেটের পাশে বাগানের ঝোঁপের মধ্যে রঞ্জিতের লাশ পাওয়া যায়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ব্যক্তির স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে বালিয়াকান্দি থানায় মামলা করেন। রঞ্জিত গ্রাম পুলিশের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি চায়ের দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

এ মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম মুক্তার শেখ (২৮)। তিনি ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ঝাউকাঠি গ্রামের বাসিন্দা। নড়াইলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বালিয়াকান্দি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাজিবুল ইসলাম। ভোটের রাতে চুরি যাওয়া ছাগল ও চুরির কাজে ব্যবহৃত অটোরিকশাও উদ্ধার করেছে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ

ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, আসামি মুক্তার শেখের শ্বশুরবাড়ি চর আড়কান্দি গ্রামে। ঘটনার দিন রাতে চর আড়কান্দি গ্রাম থেকে ছাগল চুরি করা হয়। তিনজন এই ছাগল চুরি করেন। ওই রাতে এলাকায় পুলিশের টহল ছিল। গভীর রাতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ছাগল নিয়ে গেলে পুলিশের কাছে ধরা পড়ার আশঙ্কা ছিল। এ কারণে চোরেরা একটি নিরাপদ স্থান খুঁজতে থাকে। বিদ্যালয়ের আশপাশে ফাঁকা স্থান থাকায় চোরেরা স্থানটিকে নিরাপদ ভাবে। তাঁরা বিদ্যালয়ের পাশে ছাগল ও অটোরিকশা নিয়ে ভোরের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এ সময় প্রস্রাব করতে বিদ্যালয়ের কক্ষ থেকে বের হন গ্রাম পুলিশ সদস্য রঞ্জিত কুমার দে। তিনি ছাগল ও অটোরিকশা দেখে এগিয়ে যান। রঞ্জিতকে ‘ম্যানেজ’ করার জন্য চোরের দল তাঁকে ১০ হাজার টাকা দিতে চায়। তাঁকে নগদ দুই হাজার টাকাও দেওয়া হয়। কিন্তু টাকা ফিরিয়ে দেন রঞ্জন। তিনি পুলিশকে বিষয়টি জানিয়ে দিতে চান।

পুলিশ সুপার বলেন, চোরদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় রঞ্জিতকে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর রঞ্জিতের গলায় থাকা মাফলার ধরে টেনেহিঁচড়ে ঝোপের পাশে রেখে দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের কিছু সময় পরে চোরেরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে হাটে নিয়ে ছাগল বিক্রি করে দেয়।

নিহত রঞ্জিত কুমার দে

পুলিশ সুপার বলেন, হত্যাকাণ্ডের স্থানে পোড়া মবিল ও অটোরিকশার চাকার দাগ পাওয়া যায়। পাশাপাশি ছাগল চুরির স্থানেও পোড়া মবিল ও ইজিবাইকের চাকার দাগ পাওয়া যায়। এতে করে ছাগল চুরির সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের সম্পৃক্ততা নিয়ে কাজ শুরু করা হয়।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘আমরা হাটে ছাগল বিক্রির তথ্য সংগ্রহ করে বিক্রি করা ছাগলটি উদ্ধার করি। এরপর স্থানীয় লোকজনের তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় আমরা মুক্তারের অবস্থান নির্ণয় করতে সক্ষম হই।’

প্রেসবিফ্রিংয়ের সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মুকিত সরকার, জেলা বিশেষ শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার রায় চৌধুরী, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মনিরুজ্জামান খান, বালিয়াকান্দি থানার ওসি আলমগীর হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।