জাহাঙ্গীর আলম (৪২) পেশায় কৃষক। বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রায়মনি এলাকায়। আজ শনিবার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রত্না বেগমকে (৩২) নিয়ে এসেছিলেন চিকিৎসক দেখাতে। সঙ্গে ছিল ছয় বছরের মেয়ে সানজিদা। কিন্তু সড়ক পার হওয়ার সময় ট্রাকচাপায় প্রাণ হারান তাঁরা। দুর্ঘটনাস্থলেই জন্ম হয় এক মেয়ে নবজাতকের। নবজাতক যখন পৃথিবীতে এল, তখন দুর্ঘটনায় পরপারে বাবা-মা-বোন।
আজ শনিবার বেলা তিনটার দিকে ত্রিশাল উপজেলার কোর্ট ভবন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় জাহাঙ্গীর, রত্না ও শিশু সানজিদা প্রাণ হারালেও বেঁচে যায় সদ্যোজাত নবজাতক। নবজাতক ভালো আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
নবজাতক নিয়ে হাসপাতালে হাসপাতালে ছুটোছুটি করেন জাহাঙ্গীরের স্বজনেরা। দুর্ঘটনার পরপরই প্রথমে তাকে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ময়মনসিংহ নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। স্বজনদের ভাষ্য, চিকিৎসার প্রয়োজনে ও চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁরা বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন।
সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় নবজাতকের মামি রোজিনা আক্তার, চাচা আরিফ রব্বানী ও প্রতিবেশী মো. শাহজাহানের সঙ্গে। তাঁরা জানান, বিকেলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে ব্যাপক ভিড় দেখে তাঁরা নবজাতককে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে কমিউনিটি বেজড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে হাতের প্লাস্টার করানোর জন্য নগরের বেসরকারি লাবিব হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে আবার কমিউনিটি বেজড হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক করিম খান প্রথম আলোকে বলেন, নবজাতক তাঁদের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সে ভালো আছে। আগামীকাল রোববার প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে বোর্ড গঠন করে তার চিকিৎসা দেওয়া হবে।
নিহত জাহাঙ্গীরের স্বজনেরা জানান, রত্না বেগমের আলট্রাসনোগ্রাম করানোর জন্য ত্রিশালের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে এসেছিলেন জাহাঙ্গীর। সেখান থেকে বের হওয়ার পর সড়ক পার হতে গিয়ে ট্রাকচাপায় পরিবারের তিনজন নিহত হয়। পেশায় কৃষক জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রত্না ছিলেন গৃহিণী।
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনার পর থেকেই ট্রাকের চালক পলাতক। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।