সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ সংসদ সদস্য হন। সেবার বিকল্পধারার প্রার্থী সমশের মবিন চৌধুরী মহাজোটের প্রার্থী নাহিদকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। এবারও দুজন প্রার্থী হয়েছেন। গতবার সমশের ছাড় দেওয়ায় এবার নুরুল ইসলাম ছাড় দেবেন কি না, এ প্রশ্ন এখন অনেক ভোটারের মুখে মুখে ঘুরছে।
সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৬ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হন নুরুল ইসলাম। পরে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ী হন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর টানা দুই দফা তিনি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হলেও নাহিদ মন্ত্রী হতে পারেননি। এ ছাড়া গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদ থেকেও বাদ পড়েছেন সাবেক এই শিক্ষামন্ত্রী। এরপর স্থানীয়ভাবে দলে তাঁর দাপট অনেকটাই কমে গেছে। স্থানীয়ভাবেও অনেক নেতা-কর্মী তাঁর বিরুদ্ধে এককাট্টা রয়েছেন। এ কারণেই এবার নাহিদের আসনে ১১ নেতা দলীয় মনোনয়ন চান। তবে দল শেষ পর্যন্ত নাহিদের ওপরই আস্থা রেখেছে।
সমশের মবিন চৌধুরী সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৫ সালে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। ২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দিয়ে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হন। পরে গত নির্বাচনে বিকল্পধারার মনোনয়নে সিলেট-৬ আসনে প্রার্থী হন।
বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জের ভোটের রাজনীতি নিয়ে পাঁচজন ভোটারের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেছে। ওই নির্বাচনে সিলেট-৬ আসনে বিকল্পধারার প্রার্থী ছিলেন সমশের মবিন চৌধুরী। তবে সেবার তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলামকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। এখন ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন সমশের মবিন চৌধুরী এ আসনে নির্বাচন করার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র দেওয়ার পর গতবার তাঁর ‘ছাড়ের’ বিষয়টি নতুনভাবে আলোচিত হচ্ছে।
সমশের মবিন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, তৃণমূল বিএনপির সঙ্গে সরকারের একটা সুসম্পর্ক রয়েছে। যেহেতু গতবার সমশের মহাজোটের প্রয়োজনে নুরুল ইসলামকে ছাড় দিয়েছেন, তাই এবার নুরুল ইসলাম একইভাবে সমশেরকে ছাড় দেবেন বলে মনে করছেন। তবে এটা সম্পূর্ণই অনুমানপ্রসূত। শেষ পর্যন্ত কী হয়, সেটা দেখার অপেক্ষায় আছে নির্বাচনী এলাকার মানুষজন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলামের মুঠোফোনে আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
সমশের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘আমি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। নির্বাচন যেন নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত হয়, এ দাবি জানাচ্ছি।’
সিলেট-৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মোট ছয়জন প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন। তিনি এ আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। সম্প্রতি সরওয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঠেকাতে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি আসনে দলের বিকল্প প্রার্থী রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া ভোটাররাও আমাকে নির্বাচন করার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। তাই ভোটে দাঁড়িয়েছি। জয়ও পাব বলে শতভাগ প্রত্যাশা করছি।’