যে মসজিদের দানের জিনিস নিলামে ওঠে প্রতিদিন

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে মানত হিসেবে দেওয়া একটি বাছুর নিলামে বিক্রি করা হচ্ছে। গত শুক্রবার মসজিদ প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

এক ব্যক্তি তাঁর জমি থেকে প্রথমবার কাঁচা মরিচ তুলে এর কিছুটা পলিথিনে মুড়িয়ে পাগলা মসজিদে দান করেছিলেন। সেই মরিচ নিলামে তুলে বিক্রি করা ১৫ টাকায়। আরেক ব্যক্তি তিনটি দেশি মুরগির ডিম দান করেন। সেগুলো নিলামে বিক্রি করা হয় ৫০ টাকায়। ফারিয়া আক্তার নামে এক নারী বিশেষ নিয়তে দান করেছেন একটা বাছুর। এর দাম ওঠে সাড়ে ১৭ হাজার টাকা।  

এভাবেই প্রতিদিন আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিবের নামাজের আগমুহূর্ত পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে মানুষের দান করা বিভিন্ন জিনিস নিলাম করা হয়। নিলামে অংশগ্রহণকারী ক্রেতা-বিক্রেতা ছাড়াও অনেক উৎসুক জনতা মসজিদের এ নিলাম দেখতে ভিড় জমান।

শুক্রবার বিকেলে (৫ মার্চ) কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের মানত হিসেবে দেওয়া গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ নানা রকমের জিনিস নিলামে বিক্রি করা হচ্ছে। এদিন নিলাম শেষে পাওয়া যায় অর্ধলক্ষাধিক টাকা। মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানায়, বছরের প্রতিদিনই নিলামে দান করা জিনিসপত্র বিক্রি হয়। তবে অন্য দিনের তুলনায় শুক্রবার জিনিসপত্র বেশি আসে। তাই বিক্রি করে বেশি টাকা পাওয়া যায়। মসজিদের দান বাক্সে অর্থ প্রদানের পাশাপাশি মনোবাসনা পূরণ করতে এসব জিনিস দেন হাজার হাজার মানুষ।

শুক্রবার প্রথমে মসজিদ আঙিনায় বাইরে গরু-বাছুর, ছাগল ও মুরগি নিলাম করা হয়। এরপর নিলামে ওঠে কারও গাছের প্রথম লাউ, ডাব, তরমুজ, কাঁচা মরিচ, অল্প মাষকলাইয়ের ডাল, ডিম। পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত উদ্দিনের নেতৃত্বের মসজিদে অন্য কর্মকর্তারা নিলামের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁরা বলেন, কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের প্রতিদিনকার দৃশ্য এটি। মসজিদে দান করলে মনের আশা পূরণ হয়, এমন বিশ্বাসে এখানে ছুটে আসেন হাজার হাজার মানুষ। অনেকে মোমবাতি, বাতাসা, জিলাপি ও ফল–ফলাদিসহ নানা খাদ্যদ্রব্যও বিলিয়ে দেন।

পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত উদ্দিন বলেন, সাধারণত প্রতিদিন নিলামে ৫০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। তবে প্রতি শুক্রবার দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকার আয় হয়। এসব অর্থ নিলামের পরদিন মসজিদের ব্যাংক হিসাবে জমা রাখা হয়। এ শুক্রবারের একটি ছোট গরু, ২২টি ছাগল, শতাধিক মোরগ-মুরগি ও ফল–ফলাদিসহ নানা জিনিস নিলামে বিক্রি করে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা পাওয়া গেছে।

মসজিদ সূত্র আরও জানায়, প্রতি তিন মাস পরপর এই মসজিদের দানবাক্স খোলা হয়। পাওয়া যায় কোটি কোটি টাকা। সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর মসজিদের ৯টি দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার টাকা। এটা দানবাক্স থেকে একসঙ্গে পাওয়া সর্বোচ্চ পরিমাণ টাকা। এভাবে গত তিন-চার বছরে প্রায় অর্ধশতাধিক টাকা মিলেছে দানবাক্সে।

জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ছয়তলাবিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য একটি মেগা প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে মসজিদ-মাদ্রাসাসহ অর্ধলাখ মুসল্লি যাতে একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন, এ রকম আকর্ষণীয় একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে একসঙ্গে পাঁচ হাজার নারীরও আলাদাভাবে নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। ইতিমধ্যে এর দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ১২টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশগ্রহণ করেছে। এতে প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। কাজ শুরু হলে এর কমবেশি হতে পারে। মসজিদ কমিটির কাছে বর্তমানে প্রায় অর্ধেকের কিছু বেশি টাকা রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁরা কাজ ধরতে পারবেন। তবে কাজ শুরু করলে বাকি টাকাও ব্যবস্থা হয়ে যাবে বলে তিনি আশা করছেন।