পাবনার সুজানগরে চার দিনের ব্যবধানে দুটি মন্দিরে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গত শনি ও মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। এতে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে দুর্গাপূজা উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। তাঁরা নিজেদের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠুভাবে পূজা উদ্যাপনে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
এ ঘটনার পর সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাকিউল আজমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। একই সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদ্যাপনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এলাকাবাসী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৯ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা শুরু হবে। এখন প্রতিটি মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। কোথাও কোথাও প্রতিমা তৈরির পর রঙের কাজ চলমান। এর মধ্যে গত শনিবার রাতে সুজানগর পৌর এলাকার ঋষিপাড়া বারোয়ারি পূজামণ্ডপে তৈরি করা দুর্গা প্রতিমাসহ চারটি প্রতিমা ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। সকালে মন্দিরের লোকজন বিষয়টি দেখতে পান। এরপর গত মঙ্গলবার রাতে একই এলাকার মানিকদী পালপাড়া বারোয়ারি পূজামণ্ডপে দুর্গা প্রতিমাসহ পাঁচটি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়।
মানিকদীর পালপাড়া বারোয়ারি পূজামণ্ডপের সভাপতি বিজন পাল প্রথম আলোকে বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষের দিকে। এখন শুধু রঙের কাজ বাকি। মঙ্গলবার রাতে তাঁরা মন্দির থেকে যাওয়ার সময় প্রতিমাগুলো অক্ষত দেখে যান। এরপর সকালে এসে দুর্গা প্রতিমাসহ পাঁচটি প্রতিমার মাথা ভাঙা অবস্থায় পান। বিষয়টি থানায় জানানো হলে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, রাতের আঁধারে এভাবে প্রতিমা ভাঙচুর হওয়ায় পূজা উদ্যাপন নিয়ে তাঁদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিমা মেরামতের কাজ শুরু করেছেন। আশা করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁদের পাশে থাকবে।
সুজানগর উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি সুবোধ কুমার নাটো প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলায় ৫১টি মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে পরপর দুটি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরে তাঁরা বেশ শঙ্কিত। উৎসবকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশ তৎপর আছে। তারা নিরাপত্তা জোরদার করেছে। আশা করছেন কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই পূজা উদ্যাপন হবে।
এদিকে পরপর দুটি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ প্রশাসন। এ ঘটনায় সুজানগর থানার ওসি সাকিউল আজমকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। যোগদানের মাত্র ১৫ দিনের মাথায় তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়। পাশাপাশি উপজেলার কামালপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম মোস্তফাকে সুজানগর থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী শাহ নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিমা ভাঙচুরের খবরে প্রতিটি এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহলসহ সব নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রতিমা ভাঙচুরে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে গ্রেপ্তারে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছেন দ্রুত তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে। ওসি প্রত্যাহারের বিষয়ে বলেন, ‘এটাকে প্রত্যাহার বলছি না। জনস্বার্থে তাঁকে বদলি করা হয়েছে।’
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিতে দোষীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে প্রতিটি মন্দিরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে স্থানীয় জনগণের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করছি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে দুর্গাপূজা উদ্যাপিত হবে।’