পাবনার বেড়ার বোয়ালমারী-তিন মাথা সড়কটি গত জুনে উদ্বোধন করা হয়। সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে সড়কের তিনটি স্থান ধসে যায়।
সংস্কারকাজ শেষে উদ্বোধনের তিন মাসের মধ্যেই পাবনার বেড়া উপজেলার বোয়ালমারী–তিন মাথা সড়কের তিনটি অংশ ধসে পড়েছে। এতে এসব অংশ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, সংস্কারকাজে নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় এবং প্যালাসাইডিং (সড়কের পাশের অংশের সুরক্ষা কাঠামো) কাজ যথাযথভাবে না করায় সড়কের এই দুরবস্থা হয়েছে।
সাঁথিয়া পৌর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর পৌর এলাকার বোয়ালমারী থেকে আমোষ মহল্লার তিন মাথা পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটির সংস্কার ও মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইমপ্রুভিং আরবান গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রজেক্টের (আইইউজিআইপি) আওতায় এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৮ হাজার টাকা। সড়কটির মেরামত ও প্রশস্তকরণের (৩ দশমিক ৭ মিটার) কাজ পায় ডিসিএল অ্যান্ড ওসিএল জয়েন্ট ভেনচার নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুযায়ী, সড়কটি নির্মাণকাজ ২০২৩ সালের নভেম্বরে শুরু হয়ে চলতি বছরের নভেম্বরে; অর্থাৎ এক বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। সেই অনুযায়ী গত বছরের নভেম্বরেই সড়ক মেরামতের কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু তড়িঘড়ি করে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে মাত্র সাত মাসের মধ্যেই কার্পেটিংসহ মেরামতকাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
সাঁথিয়া পৌর কার্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ‘বেশ কিছু কাজ বাকি রেখেই চলতি বছরের জুন মাসে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হককে দিয়ে সড়কটির উদ্বোধন করা হয়। সম্প্রতি কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে সড়কটির বোয়ালমারী মধ্যপাড়া, বোয়ালমারী প্রামাণিকপাড়া ও আমোষ মহল্লায় ধস দেখা দেয়। ধস দেখা দেওয়া জায়গা তিনটি মূলত পুকুর ও ডোবার পাড়–সংলগ্ন এলাকা। এই জায়গাগুলোতে ঠিকমতো মাটির ব্যবহার না করায় ও দুর্বল প্যালাসাইডিংয়ের কারণে এমন ধসের সৃষ্টি হয় বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। দ্রুত জায়গা তিনটি মেরামত না করা হলে ধস ও ভাঙনের বিস্তৃতি আরও বাড়বে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা করছেন।
১০ অক্টোবর সরেজমিনে দেখা যায়, ধস দেখা দেওয়া অংশে ঝুঁকি নিয়ে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ভ্যান ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ট্রাকসহ ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বোয়ালমারী মহল্লার মনজিলা খাতুন, রজব আলী, মাহমুদ আলীসহ সাত থেকে আটজন জানান, তড়িঘড়ি করে সড়কটির মেরামতকাজ করা হয়েছে। ফলে সড়কের অনেক জায়গা দুর্বল রয়ে গেছে। মেরামতের মাত্র মাস দুয়েকের মধ্যেই যেই সড়কের এমন হাল হয়েছে, সেই সড়ক কত দিন টিকবে, কে জানে।
সড়কে চলাচলকারী ভ্যানচালক রঞ্জু হোসেন বলেন, ‘নতুন সড়কের এত তাড়াতাড়ি নষ্ট হওয়া দেইখ্যা আমরা অবাক হয়া গেছি। ধসের এই জায়গা দিয়্যা যাতি ভয় লাগে।’
আইইউজিপি প্রকল্পের আওতাভুক্ত সড়কটির কাজ দেখভাল করছে সাঁথিয়া পৌরসভা কার্যালয়। এ বিষয়ে সাঁথিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ফিরোজুল আলম বলেন, ‘ধসে যাওয়া অংশ পরিদর্শনসহ প্রয়োজনীয় তদন্ত করেছি। ঠিকাদারের বিলও পরিশোধ হয়নি। ঠিকাদার দ্রুতই ধসে যাওয়া অংশ ঠিক করে দেবেন বলে কথা হয়েছে।’
এ বিষয়ে সাঁথিয়া পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাতুল হক জানান, ঠিকাদারকে জায়গাগুলো দ্রুত মেরামত করে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী হারুণ অর রশীদ বলেন, ‘কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টির কারণে ধস দেখা দিয়েছে। আমরা ধসের জায়গাগুলো দ্রুত মেরামত করে দেব।’