রাজশাহী নগরের মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির সামনে পুড়ে যাওয়া পুলিশের সাঁজোয়া যান থেকে যন্ত্রাংশ খুলে নিচ্ছে অনেকে। আজ মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে
রাজশাহী নগরের মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির সামনে পুড়ে যাওয়া পুলিশের সাঁজোয়া যান থেকে যন্ত্রাংশ খুলে নিচ্ছে অনেকে। আজ মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে

রাজশাহীর বহু স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরের পর রাতভর লুটপাট

রাজশাহী নগরের কাদিরগঞ্জ এলাকায় নগর ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা থেকে আজ সকাল পৌনে ৯টার দিকেও কালো ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ অফিস–আদালত খোলায় সিটি করপোরেশনের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিসে এসেছেন। কিন্তু তাঁরা ভেতরে গিয়ে যে বসবেন, সে অবস্থা নেই। পুরো ভবন ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। কক্ষগুলোয় বসার মতো চেয়ার–টেবিলও নেই। সব কাগজপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যার আগে সিটি করপোরেশন ভবনে আগুন দেওয়া হয়। সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয় লুটপাট।

নগর ভবনের প্রবেশমুখে দায়িত্ব পালন করা নিরাপত্তাকর্মী রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি রাত দুইটা পর্যন্ত ছিলেন। মানুষকে থামানো যায়নি। ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভাতে এসেছিল।

সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা সেখানে বলেন, পোড়াটা হয়তো সারানো যাবে, কিন্তু ফাইলপত্রসহ অনেক কিছুই আর পাওয়া যাবে না। সরকার অফিস খুললেও বসার মতো পরিস্থিতি নেই। কিছুক্ষণ থেকে চলে যাবেন।

নগরের সিঅ্যান্ডবি মোড় এলাকায় অবস্থিত রাজশাহী মহানগর পুলিশের সদর দপ্তরের নিচে থাকা পাঁচটি গাড়ি পুড়ে পড়ে আছে। গতকাল সোমবার বিকেলে সেগুলোয় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে সেখানে সেনাসদস্যদের দেখা গেছে। তাঁরা চলে যাওয়ার পর এখানেও লুটপাট হয়। আজ মঙ্গলবার সকালে সেখান থেকে সেনাসদস্যরা ভেতরে থাকা লোকজনকে বের করে দেন। ভেতর থেকে বাইরে আসা এক ব্যক্তি জানান, কক্ষগুলোয় কোনো চেয়ার–টেবিল নেই। কাগজপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় লোকজনসহ অনেকে রাতভর লুটপাটের উৎসব করেছেন।

অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের পর রাজশাহী নগর ভবন। আজ মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে

নগরের রাজপাড়া থানার সামনে পড়ে থাকা কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। থানা থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। বাইরে পড়ে থাকা পোড়া গাড়ির যন্ত্রাংশ অনেকেই খুলে নিচ্ছেন। খুলে নেওয়া একজন বলেন, ‘পোড়া জিনিস নিচ্ছি ভাই। এগুলো দিয়া তো পুলিশের কাজকাম নাই।’ অনেক পথচারী বাধা দিলেও তাঁরা খুলে নিচ্ছেন।
রাজপাড়া থানার পাশেই জেলা নির্বাচন অফিস। সকাল থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসে দাঁড়িয়ে আছেন। বাইরে থাকা দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে নির্বাচন অফিসের ভেতরে যেতে পারেননি কেউ।

নগরের মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি থেকে বের হওয়া ধোঁয়া এখনো অনেক বেশি। লোকজন এই ধোঁয়ার মধ্যে যে যা পারছেন নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই এসে ছবি তুলছেন। ফাঁড়ির বাইরে থাকা সাঁজোয়া যানটি পুড়ে গেছে। সেখান থেকে যন্ত্রাংশ খুলে নিচ্ছেন কয়েকজন তরুণ। নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পর হামলা হয়। পরে সেখানে সেনাবাহিনী এসে পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। থানার ভেতরে থাকা বেশ কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। থানার মূল ভবন থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। নগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানাও পোড়ানো হয়েছে। লুটপাট হওয়ার খবর পাওয়া গেছে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক থেকেও।

নগরের রাজপাড়া থানার সামনে থাকা পোড়া গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে নিচ্ছেন একজন। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে

নগরের কুমারপাড়া এলাকায় মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়। এখন আর সেটি চেনার উপায় নেই। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গতকাল বিকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর রাতের দিকে বুলডোজার দিয়ে ভাঙা হয়েছে। এখান থেকেও কয়েকজন ইট-পাথর নেওয়ায় ব্যস্ত। পথচারীরা এই ধ্বংসস্তূপ চেয়ে চেয়ে দেখছেন।

গতকাল দুপুরের পর শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাজশাহী নগরের সড়কে নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ। নারী-পুরুষ–শিশু সবাইকে রাস্তায় নেমে পতাকা নিয়ে উল্লাস করতে দেখা যায়। এই আনন্দ মিছিল যাওয়ার সময় লোকজন নগরের কুমারপাড়া এলাকায় অবস্থিত রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের মালিকানাধীন সরকার টাওয়ারে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। রাজশাহী নগরের রানিবাজার এলাকায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের ব্যক্তিগত কার্যালয়সহ আওয়ামী লীগের সব কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার বিকেলের পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দেখা যায়নি। রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের ভারতে চলে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গ্রামাঞ্চলেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বাড়িঘর ছাড়া।

এদিকে রাজশাহীতে সব অফিস–আদালত খুলেছে। মানুষজনও শহরের দিকে এসেছে। অফিস–আদালত খুললেও দোকানপাট সব খোলেনি। শহরজুড়ে অটোরিকশা থাকলেও বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। সকালের দিকে পার্শ্ববর্তী এলাকায় দু-একটি বাস চলাচল করতে দেখা গেছে।

এসব বিষয়ে কথা বলতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনারসহ অনেককে ফোন করা হলে তাঁদের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।