বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের কারণে শূন্য ঘোষিত বগুড়ার দুটি আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়ন দাখিল করেছেন দলটির সাবেক দুই নেতা। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রার্থী হয়েছেন নন্দীগ্রাম পৌর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি কামরুল হাসান সিদ্দিকী। বগুড়া-৬ (সদর) আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সরকার বাদল।
আজ বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন পর্যন্ত ২টি আসনে মোট ২২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে বগুড়া-৪ আসনে ৯ জন এবং বগুড়া-৬ আসনে ১৩ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে মহাজোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে (জাসদ–ইনু) একটি আসন ছেড়ে দিলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আরেক আসনে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে জাসদ।
দলীয় সিদ্ধান্তে দুটি আসন থেকে বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করায় বগুড়া-৪ এবং বগুড়া-৬ শূন্য আসনে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণের জন্য তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ৮ জানুয়ারি মনোনয়ন বাছাই এবং ১৫ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগ থাকবে।
বগুড়া-৪ আসনে প্রার্থী হওয়া নন্দীগ্রাম পৌর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি কামরুল হাসান সিদ্দিকী দুই মেয়াদে নন্দীগ্রাম পৌরসভার মেয়র ছিলেন। তবে বর্তমানে বিএনপিতে কোনো পদে নেই। তিনি উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন।
কামরুল হাসান সিদ্দিকী বলেন, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে এখন আর সক্রিয় নন তিনি। ব্যক্তিগত ইমেজের কারণেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। কোন দল, কী ভাবল, কী সিদ্ধান্ত নিল তাতে তাঁর কিছুই যায়–আসে না।
বগুড়া-৬ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সরকার বাদল। বিএনপির সমর্থনে ২০১৪ সালে তিনি শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। জেলা বিএনপির সাবেক সদস্যও ছিলেন তিনি। সম্প্রতি বিএনপিতে তিনি উপেক্ষিত। তিনি স্বতন্ত্র থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
সরকার বাদল বলেন, ‘সদর উপজেলা বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছি। অনেক নেতা-কর্মী দলে কোণঠাসা এবং উপেক্ষিত। সাধারণ ভোটারের অনুরোধেই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। দলে বর্তমানে পদে নেই। এ কারণে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করার কোনো বিষয় নেই।’
সাবেক দুই নেতার বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি ও বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বলেন, ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র ফেরানোর জন্য দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে বিএনপির সদস্যরা পদত্যাগ করেছেন। এখন সেখানে দলীয় কোনো নেতার প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁরা দলে কোনো পদে নেই। দলের সঙ্গে তাঁদের কোনো সর্ম্পকও নেই।
বগুড়া-৪ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে অনেকেই দলীয় মনোনয়ন চাইলেও সেখানে দল থেকে কোনো প্রার্থী দেওয়া হয়নি। এই আসনে ২০১৪ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন জাসদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন। কার্যত জাসদকে আসনটি ছেড়ে দিতেই দলীয় প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। রেজাউল করিম ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির কাছে হারলেও এবারের উপনির্বাচনে মহাজোট থেকে প্রার্থী হয়েছেন।
আজ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। আনোয়ার দল থেকে এই আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন চেয়ে পাননি।
বগুড়া-৪ আসনে জাসদকে ছাড় দিলেও বগুড়া-৬ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসানের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে জাসদ। এখানে জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক প্রার্থী হয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি দল থেকে মনোনয়নও পেয়েছেন।
রাগেবুল আহসান ও ইমদাদুল হক দুজনই রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের নিকট মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এ সময় রাগেবুল আহসান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বগুড়ার উন্নয়নের জন্য আমার হাতে নৌকা তুলে দিয়েছেন। সংসদের মেয়াদ এক বছর। বগুড়ার উন্নয়ন করার জন্য এই এক বছরই যথেষ্ট।’
এ ছাড়া এ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নান আকন্দ। তিনি বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। বিগত বগুড়া পৌরসভা এবং বগুড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দিতা করেন তিনি।
বগুড়া-৬ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করা ১৩ জন হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাগেবুল আহসান, জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম, জাসদের ইমদাদুল হক, গণ ফ্রন্টের আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনসুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফতে আন্দোলনের প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম, জাকের পার্টির প্রার্থী মো. ফয়সাল বিন শফিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী (সাবেক বিএনপি নেতা) সরকার বাদল, আবদুল মান্নান আকন্দ (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী), স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ কবির আহম্মেদ, আশরাফুল হোসেন (হিরো আলম), রাকিব হাসান ও সচেতন নাগরিক কমিটির জেলা কমিটির সভাপতি মাছুদার রহমান।
অন্যদিকে বগুড়া-৪ আসনে মনোনয়ন দাখিল করেছেন জাসদের এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন, জাতীয় পার্টির শাহীন মোস্তফা কামাল, জাকের পার্টির আবদুর রশিদ সরদার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের তাজ উদ্দীন মণ্ডল, স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন (হিরো আলম), গোলাম মোস্তফা, ইলিয়াস আলী, কামরুল হাসান সিদ্দিকী (সাবেক বিএনপি নেতা) ও আবদুর রশিদ। বেশির ভাগ প্রার্থী বগুড়া জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলামের কাছে আজ দুই আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।