বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘দেশের রাষ্ট্রকাঠামো এই সরকার বিভিন্ন সময়ে ভেঙে ফেলেছে। এটা মেরামতযোগ্য হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রকাঠামো সাধারণভাবে মেরামত শব্দটি অনেকের কাছে স্বাভাবিক মনে হয় না। আমরা বলতে পারতাম রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার আনার কথা, রাষ্ট্রকাঠামোর পরিবর্তন আনার কথা। এটাকে এমনভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছে যে এটা সংস্কার করার পর্যায়ে নেই।’
আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির ১০ দফা দাবি এবং রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে দেওয়া ২৭ দফা প্রস্তাবের বিষয়ে এক কর্মশালা শুরুর আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এই কর্মশালার আয়োজন করে জেলা বিএনপি।
বিএনপি যদি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায়, তবে রাষ্ট্রকাঠামো এই প্রস্তাবের আলোকে মেরামত করা হবে বলে মন্তব্য করেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, আর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব না পেলে এই প্রস্তাবের আলোকে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে জনমত সৃষ্টি করা হবে।
দেশে যেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না, সেখানে গণতন্ত্র আছে; তা দাবি করা হাস্যকর ব্যাপার। যখন রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়, তখন সেটা মেরামতযোগ্য হয়ে পড়েছে।নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা সবাই জানি এই রাষ্ট্রকাঠামো কারা ভেঙেছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম গণবিরোধী যে আইন চুয়াত্তরের বিশেষ ক্ষমতা আইন তারা (আওয়ামী লীগ) করেছে। সংবিধানে জরুরি অবস্থা জারির বিধান ছিল না, এটা তারা করেছে। তারা জরুরি অবস্থা জারিও করেছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে বিরোধী দলকে নির্যাতন–নিপীড়ন করা হয়েছে। তারপরও যখন আন্দোলন ঠেকানো যায়নি, তখন জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। তারপরও যখন ঠেকানো যায়নি, তখন সংসদে কয়েক মিনিটের মধ্যে বাংলাদেশের সংবিধান, রাষ্ট্রকাঠামো, রাজনৈতিক ব্যবস্থা, গণতন্ত্র—সবকিছু ভেঙেচুরে একটা নতুন ব্যবস্থা জারি করা হলো। গণতন্ত্র, বাক্স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হলো এবং সব ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত করা হলো।’
১৯৭৪ সালেই রাষ্ট্রকাঠামো সবচেয়ে বেশি ভাঙচুর হয়েছে উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম বলেন, এরপর বিভিন্ন সময় কিছু কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু গত ১৪ বছরে যেটা হয়েছে, সেটা হলো এই রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। দেশের প্রশাসন বলেন, আইনশৃঙ্খলা বলেন, বিচার বলেন—প্রতিটি বিভাগ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।
নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে গণতন্ত্র থাকে না উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, দেশে যেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না, সেখানে গণতন্ত্র আছে; তা দাবি করা হাস্যকর ব্যাপার। যখন রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়, তখন সেটা মেরামতযোগ্য হয়ে পড়েছে। সে জন্য এই রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের জন্য বিএনপি কিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। এই প্রস্তাবে যেসব কথা বলা হয়েছে, তা অভিজ্ঞতা থেকেই বলা হয়েছে। এই যে স্বাধীনতার পর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদ এটা শুধু সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট করছে, তা নয়। মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপরও প্রভাব ফেলছে।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, হাছান মাহমুদ নামে তথ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাঁর কথা আর কাজে মনে হয় তিনি আসলে জিয়া পরিবারের সমালোচনাবিষয়ক মন্ত্রী। কারণ, সারা দিনরাত তিনি দেশের কথা বা তথ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক কথা না বলে শহীদ জিয়ার বিরুদ্ধে না হয় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে, না হয় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে; না হয় বিএনপির বিরুদ্ধে বলেন।
পরে দলীয় নেতা–কর্মীদের নিয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপির রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য জেড এম মর্তুজা, সাবেক সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান, জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, সহসভাপতি ইউনুস আলী, ওবায়দুল্লাহ মাসুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।