এক বছর আগে জহুরুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও হাকিম খানকে সদস্যসচিব করে কমিটি গঠন করা হয়।
পাবনার ফরিদপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে দলীয় নেতা–কর্মীরা দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এক পক্ষের দাবি, ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে বহিষ্কৃত নেতাদের নিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে একদিকে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট ও দলীয় কর্মকাণ্ডে ভাটা পড়েছে। নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির ছয়টি ইউনিয়ন কমিটি গঠনের দায়িত্ব থাকলেও একটি কমিটিও হয়নি।
তবে অন্য পক্ষ বলছে, নিয়ম মেনেই কমিটি গঠন করা হয়েছে। নেতা–কর্মীরাও চাঙ্গা আছেন। ইউনিয়ন কমিটি গঠনসহ দলীয় সব কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে চলছে।
প্রায় এক বছর আগে বিএনপি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল হাকিম খানকে সদস্যসচিব করে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ চেয়ে বাদ পড়েন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন জোয়াদ্দার ও সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউর রহমানসহ কয়েকজন নেতা। এরপরই দলে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। দুভাগে বিভক্ত হতে থাকেন উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা। শুরু হয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল। এক পক্ষ কোনো কর্মসূচি দিলে অন্য পক্ষ তাতে অংশ নেয় না।
কমিটি থেকে বাদ পড়া নেতাদের দাবি, আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব দুজনই দলের বহিষ্কৃত নেতা। ২০১৮ সালে আহ্বায়ক জহুরুল ইসলাম দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তিনি বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। অন্যদিকে সদস্যসচিব আবদুল হাকিম খান ২০১৪ সালে বিএনপি মহাসচিবের স্বাক্ষর জাল করে নিজেকে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোষণা করায় দল থেকে বহিষ্কৃত হন। কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নাসরিন পারভীনও বারবার দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কৃত হয়েছেন। এই রকম নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠন হওয়ায় উপজেলায় বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। ফলে নেতা-কর্মীরা কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন না। দলীয় কর্মকাণ্ডে চরম ভাটা পড়েছে।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন জোয়াদ্দার বলেন, দলীয় নেতা-কর্মীদের সমর্থন না থাকায় আহ্বায়ক কমিটি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। উপজেলায় দলীয় কোনো কর্মসূচি সঠিকভাবে পালিত হচ্ছে না। আহ্বায়ক কমিটির দায়িত্ব ছিল তিন মাসের মধ্যে ছয়টি ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা। এই কাজটিও করতে পারেনি তারা। একটি ইউনিয়নেও কমিটি গঠিত হয়নি।
আবুল হোসেন জোয়াদ্দারের দাবি, একটি চক্র বিএনপিকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে। এই নেতারা টাকার বিনিময়ে কমিটি গঠন করছেন। তাঁদের কারণে জেলার প্রতিটি উপজেলায় বিএনপি দুভাগে বিভক্ত হয়েছে। শুধু জনগণ বিএনপিকে ভালোবাসে। এ জন্য বিএনপি টিকে আছে।
এ প্রসঙ্গে কমিটির আহ্বায়ক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘দলীয় নিয়মনীতি মেনেই আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছে। আমার বহিষ্কারাদেশ নির্বাচনের তিন মাস পরই প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে দলীয় বড় পদটি সবাই চান। পদ না পেলে অনেকে ক্ষুব্ধ হন। এখানেও তাই হয়েছে। তবে আমরা সবাইকে নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি। ইউনিয়ন কমিটি গঠনের কাজও চলছে। দ্রুতই কমিটি ঘোষণা করা হবে।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব মাসুদ খন্দকার বলেন, দলীয় বিভিন্ন কারণে নেতারা বহিষ্কার হতে পারেন। তবে দলীয় স্বার্থেই আবার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। ফরিদপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে যাঁরা আছেন, তাঁদের কারও বহিষ্কারাদেশ নেই। দু–একজন নেতা পদ না পেয়ে এসব অভিযোগ করছেন।