এই ওয়ার্ডের অনেক সড়ক বেহাল। অনেক এলাকায় দুর্গন্ধে মানুষকে নাক চেপে হাঁটতে হচ্ছে।
রাস্তার পাশে নালা থেকে তোলা বর্জ্যের স্তূপ। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সব নালার ঢাকনা খোলা। নালার উপচে পড়া ময়লা পানিতে সয়লাব রাস্তা। এসবের মধ্যে ভোগান্তি নিয়ে পথ চলতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। দুর্ভোগের এই চিত্র খালিশপুর পুরোনো হাউজিং এস্টেট এলাকার। এলাকাটি পড়েছে নগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে।
ওই এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকার নর্দমা থেকে নিয়মিত ময়লা পরিষ্কার করা হয় না। তিন-চার মাস পরপর কিছুটা করে ময়লা তোলা হয়। ময়লার দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়ে পড়ে। আর একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তার ওপর হাঁটুসমান পানি হয়ে যায়। তখন ময়লা ছড়িয়ে পড়ে পুরো রাস্তায়। পানি শুকিয়ে গেলেও রাস্তায় থাকে থকথকে কাদা।
পুরোনো হাউজিং এস্টেটের এস লাইনের বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর ও সরকারি ব্রজলাল কলেজের শিক্ষার্থী মো. রিয়াজ বলেন, প্রতিটি পরিবার থেকে ময়লা সংগ্রহ বাবদ মাসে ৫০ টাকা করে রাখা হয়। তবে ময়লা নিয়ে যায় তিন-চার দিন পরপর। এলাকার নর্দমা-রাস্তা এক হয়ে গেছে। আবার নর্দমা পরিষ্কার হয় বহু মাস পরপর। আর বৃষ্টি হলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। তখন রাস্তায় পানি, মলসহ নানা বর্জ্য ভাসতে থাকে।
খালিশপুর হাউজিং সেন্ট্রাল ব্লক, সাউথ সেন্ট্রাল ব্লক, পুরোনো হাউজিং এস্টেট, হাউজিং তিনতলা, চারটি জেনেভা ক্যাম্প (বিহারি ক্যাম্প) এলাকা নিয়েই ১২ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের সীমানা হলো উত্তরে খালিশপুর ঈদগাহ রোড ভায়া আবাসিকের ১৬ নম্বর রোড হয়ে মার্কেট রোড দিয়ে বিআইডিসি রোডের সংযোগস্থল। দক্ষিণে পুরোনো যশোর রোড এবং বিআইডিসি রোডের সংযোগস্থল থেকে ১৮ নম্বর রোডের সংযোগস্থল পর্যন্ত। পূর্বে বিআইডিসি রোড এবং পশ্চিমে হাউজিং ১৮ নম্বর রোড।
নগরের নামকরা খালিশপুর প্রভাতি স্কুল, রোটারি স্কুল, হাজী মুহাম্মদ মুহসিন কলেজ, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কার্যালয়, খালিশপুর থানা ভবন এই ওয়ার্ডের মধ্যেই। প্রায় ৪৪ হাজার জনসংখ্যার এই ওয়ার্ডের ভোটার ১৮ হাজারের মতো। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ভোটার উর্দু ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর।
৫ মে ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ নর্দমা ময়লায় পূর্ণ। খালিশপুর থানার প্রধান ফটকসংলগ্ন নর্দমা ময়লা আর মাটিতে একাকার হয়ে আছে। ওয়ার্ডে নতুন করে কিছু নর্দমা ও রাস্তার কাজ চলছে। তবে একটির সঙ্গে অন্য নর্দমার সংযোগ নেই। পৌরসভা মোড়ের অদূরে আজিমের লাইন রোড থেকে ১২ নম্বর রোড পর্যন্ত নতুন একটি ঢাকনাযুক্ত নালা হয়েছে, যাকে ‘ওয়াকিং ড্রেন’ বলা হচ্ছে, তার ওপর আবর্জনায় ভরা। ফলে সেখান দিয়ে হাঁটার কোনোরকম সুযোগ নেই। ওয়ার্ডের অনেক সড়ক একবারে বেহাল। অনেক এলাকায় দুর্গন্ধে মানুষ নাক চেপে হাঁটতে হচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, এলাকায় কিছু উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। কিছু চলমান আছে। তবে ড্রেনেজ সমস্যা, মাদক, মশার উৎপাত, বর্জ্য অব্যবস্থাপনা, পয়োনিষ্কাশন সমস্যা, জলাবদ্ধতাসহ নানা সমস্যায় ভুগছেন এখানকার মানুষ।
খুলনার সবচেয়ে বড় বিহারি ক্যাম্প ১ নম্বর আল ফালাহ ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহম্মদ আহম্মদ বলেন, ক্যাম্পে নানা সমস্যা রয়েছে। নারী-পুরুষের জন্য ২০টি কমিউনিটি শৌচাগার আছে। সেগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। প্রতিটি পরিবার থেকে টাকা তুলে সেগুলো পরিষ্কার করা হয়। সুপেয় পানিরও অনেক সমস্যা এখানে। আর এখানকার অনেক ছেলে কাজে যাওয়ার চেয়ে মাদক নিয়ে পড়ে থাকে। এই এলাকা মাদকে একবারে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
কোহিনূর মোড়, শিয়া মসজিদ, ১ নম্বর আল ফালাহ ক্যাম্প, হাউজিং বাজার, বক্কার বস্তি, ফায়ার সার্ভিস মোড়, প্রভাতি স্কুলমাঠ এলাকা, বায়তুল ফালাহ এলাকায় মাদকের উপদ্রব অনেক বেশি। কাউন্সিলর পদে লড়তে যাওয়া প্রার্থীদের কয়েকজন অভিযোগ করেন, কাউন্সিলের কাছের লোকজন এসব নিয়ন্ত্রণ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ওয়ার্ডে কম করে সাতজন কাউন্সিলর পদে লড়তে চান। তাঁদের একজন প্রার্থী মো. রবিউল গাজী বলেন, সড়ক ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার বেহাল। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার মধ্যে বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ায় ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
জামায়াতে ইসলামীর খুলনা মহানগরের সাবেক নায়েবে আমির শফিকুল আলম আগেও দুইবার নির্বাচন করেছেন। এবারও তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর কাউন্সিলরের দায়িত্বে থেকেও বর্তমান জনপ্রতিনিধি জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী উন্নয়ন করতে পারেননি। সবচেয়ে বড় সমস্যা পানি ও পয়োনিষ্কাশন। ময়লা-আবর্জনা বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায়। ওয়ার্ডের মোড়ে মোড়ে মাদক কেনাবেচা হয়।
খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও কাউন্সিলর প্রার্থী তাহিদুল ইসলাম বলেন, ষাটের দশকে খালিশপুর আবাসিক এলাকা হয়েছে, অথচ আবাসিকের উন্নত পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা থেকে মানুষ বঞ্চিত।
১২ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মুনিরুজ্জামান টানা তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপির সাবেক এই নেতা কাউন্সিলর হওয়ার পর আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন।
কাউন্সিলর মো. মুনিরুজ্জামান বলেন, অনেক উন্নয়ন করা হয়েছে। ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট অনেক হয়ে গেছে। বাকিগুলো দরপত্রের অপেক্ষায়। ড্রেনের ক্ষেত্রে তা–ই। অনেকটা হয়ে গেছে, অনেকগুলো ড্রেন দরপত্রের অপেক্ষায়। আর ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় কাজ চলমান থাকায় ময়লার গাড়ি সব জায়গায় সব সময় যেতে পারছে না।