ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের সব নদ-নদীর পানি বেড়েছে। কুড়িগ্রামের ধরলা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি বাড়লেও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ বুধবার সকালে দুটি জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে এমন পরিস্থিতির কথা জানা যায়।
আজ সকাল ৯টায় কুড়িগ্রামের পাউবো সূত্রে জানা যায়, তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমা বরাবর প্রবাহিত হচ্ছে। আর তিস্তা নদীর পানি সমতলে বেড়ে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে কুড়িগ্রামের পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চল ও উজানে আগামী ২৪ ঘণ্টা ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। এতে কুড়িগ্রামের ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতলে বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে স্বল্প মেয়াদে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে নদ-নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র নদ ও গঙ্গাধর নদীর অববাহিকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় পশুচারণভূমি পানির নিচে ডুবে গিয়ে খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে।
নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের গরুভাসার চরের বাসিন্দা তাজেল উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, তিন দিন ধরে ভারী বৃষ্টির কারণে নুনখাওয়া ইউনিয়নের প্রায় ১০টি চরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গরুভাসার চরে গঙ্গাধরের ভাঙনে এক সপ্তাহে শতাধিক বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। নদীভাঙনের শিকার পরিবারগুলো অন্যের বাড়িতে ও স্কুলঘরে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো হতো।
উলিপুর উপজেলার আলগার চরের বাসিন্দা মাইদুল ইসলাম বলেন, তিন দিনের ভারী বৃষ্টিতে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতলে বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পশুচারণভূমি ডুবে গিয়ে খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে।
এদিকে গাইবান্ধায় আজ বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সব নদ-নদীর পানি বেড়েছে। পানি বাড়লেও ব্রহ্মপুত্র নদ, ঘাঘট, তিস্তা ও করতোয়া নদীর বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গাইবান্ধার পাউবো সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ৬৪ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ৬৫ সেন্টিমিটার, করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার চকরহিমাপুর পয়েন্টে ৮১ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জ উপজেলাসংলগ্ন কাউনিয়া পয়েন্টে ৩৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে। সেই সঙ্গে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার, ঘাঘটের পানি ৪৮ সেন্টিমিটার, করতোয়ার পানি ২৬৭ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি ৩১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
গাইবান্ধার পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, উজানের ঢলে ও ভারী বৃষ্টির কারণে জেলার নদ-নদী পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নদ-নদীর পানি বাড়ায় গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি, মোল্লারচর, গিদারি ও ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ি, ফজলুপুর, কঞ্চিপাড়া এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া, তারাপুর ও হরিপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।