খুলনায় টানা বৃষ্টিতে জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গতকাল রোববার দুপুরের পর থেকে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। আজ সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অবিরাম গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। গতকাল ভারী বর্ষণে ডুবে যাওয়া স্থানগুলো থেকে আজ পানি সরলেও এখনো নগরের বেশ কিছু স্থান ও সড়ক প্লাবিত হয়ে আছে। বেশ কিছু সড়কে সংস্কারকাজ চলমান থাকায় কাদাপানির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আজ সোমবার ছুটির দিনে খুলনায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন কম বের হয়েছেন। সেই সঙ্গে ভোর থেকে বৃষ্টিতে নগরজুড়ে স্থবিরতা নেমে আসে। কাজে যেতে না পেরে নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ বিপাকে পড়েন।
আজ দুপুর ১২টার দিকে নগরের জাতিসংঘ শিশু পার্ক এলাকায় রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মো. আল- আমিন। তিনি বলেন, ভারী বৃষ্টি হলে রিকশার চাহিদা বাড়ে। আবার রিকশাও কিছুটা কম থাকে। আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে মানুষ হেঁটে চলাফেরা করেন কিংবা ইজি বাইকে যান। আজ সকাল থেকে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে, এ কারণে রোজগারও কম। গতকাল বাড়তি কিছু আয় হয়েছিল। আজ ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ১০০ টাকা আয় হয়েছে। সারা দিনে রিকশার মালিককে জমা দিতে হয় ৩১০ টাকা। বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমেনি। কীভাবে পেট চলবে, তা নিয়ে চিন্তায় আছেন।
খুলনা আবহাওয়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রোববার সকাল থেকে আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত খুলনায় ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আজ সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত আরও ২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। খুলনা আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টি কমে যাবে। আবার তিন–চার দিন পর বৃষ্টি শুরু হবে। এভাবে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলবে।
গতকালের ভারী বৃষ্টিতে নগরের খালিশপুর, মুজগুন্নী, বাস্তুহারা কলোনি, হাউজিং এলাকা, ফুলবাড়ি গেট, রেলগেট, মহেশ্বরপাশা, দৌলতপুর, নতুন রাস্তা মোড়, আলমনগর, নেভি চেকপোস্ট, রায়ের মহল, বয়রা বাজার, গল্লামারী, গোবরচাকা নবীনগর, ময়লাপোঁতা, রয়েল মোড়, টুটপাড়া জোড়াকল বাজার, মহিরবাড়ি খালপাড়, রূপসা ঘাট, নতুন বাজারসহ নগরের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সড়ক ও নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে যায়। সড়কের পাশে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ে। নিম্নাঞ্চলে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। এতে দুর্ভোগে পড়েন নিম্নবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষ।
আজ নগরের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের মোতলেবের মোড় এলাকা, নগরের বয়রা নতুন রাস্তা সড়কের পুলিশ লাইনস এলাকা, মুজগুন্নী শিশুপার্ক এলাকা, আবু নাসের হাসপাতালের আশপাশের এলাকায় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। নগরের সাতরাস্তা মোড় থেকে মোতলেবের মোড় হয়ে বাগমারা প্রধান সড়কে সংস্কারের কাজ চলছে। এই সড়কে খানাখন্দ ও পানিকাদা একাকার হয়ে চলাচল করা কষ্ট হয়ে পড়েছে।
পথচারী শিক্ষার্থী অলোক বৈদ্য বলেন, কয়েক মাস ধরে এসব রাস্তায় কাজ হচ্ছে। রাস্তায় ওপরেই পাথরের স্তূপ করা, খোঁড়াখুঁড়ি, ভাঙাচোরা এসব তো আছেই। বৃষ্টিতে পানি জমে এসব রাস্তায় আর চলার উপায় নেই বললেই চলে।
সোনাডাঙ্গা নতুন রাস্তা সড়কের মুজগুন্নী আর শিশুপার্কের মাঝামাঝি পুলিশ ফাঁড়ির সামনে রাস্তায় কয়েক ফুট লম্বা একটা গর্ত তৈরি হয়েছে। সেখানে দাঁড়িয়ে একটি ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রহরী আবদুল হামিদ বলেন, রাস্তা গর্ত হয়ে অবস্থা খুব খারাপ। বৃষ্টির পর গর্ত আরও বড় হয়েছে। প্রতিদিন দুর্ঘটনা হচ্ছে। লাল নিশানা টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার পরও আজ সকালে চারটি ইজি বাইক পড়ে গেছে।
সড়কটির শিশুপার্ক এলাকার খান মোটরস নামের একটি দোকানের কর্মী মো. নাদিম বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা খুব দুর্বল। পানি জমে থাকার কারণেই রাস্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাস্তা এতটাই খারাপ হয়েছে যে এখান দিয়ে কোনো কিছু স্বাভাবিকভাবে চলতে পারছে না।
খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় গত ছয় বছরে ১০৪টি ড্রেন পুনর্নির্মাণ করেছে। ময়ূর নদসহ সাতটি খাল পুনঃখনন ও ৩২টি ড্রেনের সংস্কার চলছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০২ কোটি টাকা। এই বিপুল অর্থ ব্যয়ের পরও নগরের জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এখনো একটু বেশি বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যাচ্ছে নগরের নিম্নাঞ্চল। প্রধান সড়কগুলোয় তৈরি হচ্ছে জলজট।